কলকাতা: ভারতে ১৯৯৯ সালে উপমন্যু চট্টোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে দেব বেনেগাল নির্মিত বিতর্কিত হিন্দি সিনেমা ‘স্প্লিট ওয়াইড ওপেন’ -এর আশঙ্কা সত্যে পরিণত হতে চলেছে ভারতে। রাহুল বোস অভিনীত এ সিনেমায় দেখানো হয় মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকার পানি সংকট।
আগামীতে এ সমস্যা গোটা ভারতকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চলেছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারতে মোট পানির চাহিদা ছাপিয়ে যাবে বর্তমানের সব জলের উৎস।
অর্থাৎ, ২০২৫ সালে পানি সংকটের মুখে পড়তে চলেছে ভারত। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতে পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত পানির ৮০ শতাংশ মাটির তলা থেকে আসে। গোটা দেশে মাটির তলায় জলের স্তর নেমে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে এ আশঙ্কা।
জানা যায়, পানীয়জলের ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসতে চলেছে ভারতে। যা ভারতে আশা অন্য ক্ষেত্রের বিদেশি বিনিয়োগ থেকে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, এ সমস্যার জন্য আমেরিকা, জার্মানি, কানাডা, ইতালি, ইসরায়েল, চীন ও বেলজিয়াম থেকে পানির জন্য ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান আসবে ভারতে।
এই অনুদানের প্রথম ভাগ হিসেবে ১৮০০ কোটি রুপি আসবে আগামী তিন বছরে। যদিও ভারতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার করার পরিকল্পনা চালু হয়েছে। কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ এখনো অধিকাংশ এলাকায় দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সংকটের কারণ দু’টি- প্রথমত ভারতের কারখানা ও গৃহস্থ্যে প্রচুর পানি ব্যবহার হয়। দ্বিতীয়ত, ভারতের মানুষ প্রচুর পানি নষ্ট করেন।
ভারতের বিভিন্ন শহরে পানির উপর এরই মধ্যে কর বসেছে। যদিও কলকাতায় এ কর এখন চালু হয়নি। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এ প্রসঙ্গে একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, পানি চুরি করলেই এবার জরিমানা দিতে হবে মোটা অঙ্কের। শুধু জরিমানা দেওয়া নয়, জুটতে পারে কারাবাসও।
শুধু কলকাতা উচ্চ আদালতই নয় অতিসম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ উচ্চ আদালত সিমলায় পানি সংকটের কারণ জানতে চেয়েছে সরকারের কাছে।
এ বিষয় নিয়ে গোটা দেশে আলোচনার সূত্রপাত ভূপালের এক সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট পানি সমস্যার তীব্রতা নিয়ে বলতে গিয়ে। একটি সভায় তিনি বলেন, পুরুষদের তিনটি বিয়ে দরকার, একজন স্ত্রী সন্তানদের পালন করবে, বাকি দু’জন যাবে জল আনতে।
অন্যদিকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও পানি সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে কেজরিওয়াল সরকারের কড়া সমালোচনা করছেন বিরোধীরা।
পূর্ব দিল্লির সাগরপুর এলাকায় পানির সংকটের ফলে হাতাহাতির শিকার হন এক আমআদমি পার্টির কর্মী। জানা যায়, দিল্লির শাসকদলের অফিসেও হামালা চালায় উত্তেজিত জনতা।
তবে একথা সবাই মানছেন আগামী দিনে পানির সমস্যায় পড়তে চলেছে ভারত। এ মুহূর্তে সরকার ও জনগণ সতর্ক না হলে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।