বখতিয়ার আলম রনি রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে যে গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দুজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন, সেই গাড়িটির মালিক তাঁর মা সাংসদ পিনু খান। তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, দু-এক দিনের মধ্যে ওই প্রাডো গাড়িটি জব্দ করা হবে।
তদন্তে ও রিমান্ডে থাকা বখতিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ তথ্য পেয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, চার দিনের রিমান্ড শেষে আজ শনিবার বখতিয়ারকে আদালতে পাঠানো হবে।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বখতিয়ার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি থেকে লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। বখতিয়ার জানান, প্রাডো গাড়িটি তাঁর মা পিনু খান সাংসদের কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে কিনেছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার পর অন্য তিন বন্ধু গাড়িতে ওঠেন। এঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর ও কামাল যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অপর বন্ধুটি আওয়ামী লীগ করেন।
বখতিয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, ওই রাতে তাঁরা প্রথমে বাংলামোটরের একটি বারে যান। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ে যান। সেখান থেকে বখতিয়ার তাঁর গাড়িতে করে মগবাজারে নামিয়ে দেন জাহাঙ্গীরকে। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে বাংলামোটর হয়ে হাতিরপুলে যান। নিউ ইস্কাটনে রাত পৌনে দুইটায় যানজটে পড়লে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। তখন তিনি চালকের পাশের আসনে বসে ছিলেন। আর পেছনের আসনে ছিলেন কামালসহ দুই বন্ধু। এরপর হাতিরপুলের বাসার সামনে কামালকে এবং অন্যজনকে আরেক স্থানে নামিয়ে ধানমন্ডির বাসায় ফেরেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে বখতিয়ার বলেন, তাঁর কোনো রোগ নেই। পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় তিনি ভয় পেয়েছিলেন। এ কারণে অসুস্থতার ভান করেছেন।
ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, প্রাডো গাড়িটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। এটি জব্দ করার জন্য ইতিমধ্যে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বখতিয়ার রাজনীতিবিদ নন কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীও নন। এ ক্ষেত্রে মায়ের প্রভাব খাটিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পিস্তলের লাইসেন্স নিয়েছেন।
১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে প্রাডো গাড়ি থেকে গুলি ছোড়া হলে রিকশাচালক হাকিম ও জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে জড়িত বলে শনাক্ত করে।