আলো ছড়িয়েও আঁধারে থাকা একজন ‘মাহমুদুল্লাহ’

Slider খেলা


আজ ক্রিকেট বিশ্বে সমীহ জাগানিয়া যেই লাল-সবুজ রূপটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন তার রূপকার তিনি। যিনি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সূতিকাগার। তার হাত ধরেই আগমন বাংলার ক্রিকেটের নতুন দিনের, উদয়ন নতুন সূর্যের। হারতে হারতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় নতুন উদ্যম নিয়ে পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। বলছিলাম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা।

স্মৃতির দোলাচলে ফিরে দেখুন পুরনো দিনগুলো, একবিন্দুও ভুল নয়। বাংলার ক্রিকেটের উদ্যমী জাগরণটা তো শুরু হয়েছিলো সেই ২০১৫ সালে ক্যাঙ্গারুর দেশ থেকেই। সেবার বিশ্বকাপে থ্রি লায়ন্সদের হারানোর মধ্য দিয়েই সফলতার দ্বার উন্মোচিত হয় বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ।

যার পেছনের নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার সেঞ্চুরিতে ভর করেই থ্রি লায়ন্সদের হারায় টাইগাররা। বিশ্বকাপের মঞ্চে দেশের হয়ে অভিষেক শতক তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তার শতকের গর্জনেই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল অর্জন!

শুধুই ১৫’ বিশ্বকাপ বললে ভুল হবে। দেশের প্রায় সব বড় জয়গুলোতেই রয়েছে মাহমুদুল্লাহর কম-বেশি অবদান। ১১’ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধ কিংবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কিউই বধ, খুঁজলে বের হয়ে আসবে আরো ছোট-বড় অসামান্য সব উপাদান। কিন্তু দিনশেষে হারিয়ে যান বড় নামের ভিড়ে। আড়ালে পড়ে যায় তার কীর্তিগুলো। বনে যান পার্শ্বনায়ক। পাদপ্রদীপের নিচে থাকাই যেন তার নিয়তি!

সাকিব, মাশরাফিদের মতো মাহমুদুল্লাহও বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল স্তম্ভগুলোর একটি। তবে অন্য সবার মতো সহজ নয় তার পথচলা, প্রতিটি ধাপেই নিজেকে প্রমাণ করে যেতে হয় রিয়াদের। কেননা সাকিব, মাশরাফির মতো তুমুল দর্শকপ্রিয় নন তিনি। হালের সৌম্য, সাব্বির তাসকিনদের তুলনায়ও পিছিয়ে আছেন এই অলরাউন্ডার। তাকে নিয়ে মাতামাতি কিংবা আলোচনা, অন্য সবার তুলনায় নিতান্তই কম হয়।

তবে নায়ক কিংবা পার্শ্বনায়ক ভূমিকা যেটাই হোক, যে কীর্তিগাঁথা রচনা হয়ে গেছে তার হাতে, তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অমরত্ব পেয়ে যাবেন। যতদিন, যতযুগ ক্রিকেট বাঁচবে, ততদিন মাহমুদুল্লাহ’র নাম মনে রাখতেই হবে। না রাখতে চাইলেও রেকর্ড এসে দাঁড়িয়ে যাবে চোখের সামনে। মনে করিয়ে দেবে, একজন মাহমুদুল্লাহর সত্যিই খুব বেশি প্রয়োজন!

২০০৭ সালের ২৫ জুলাই কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। অভিষেকেই জানান দেন, তিনি আসছেন বাংলাদেশ নামক পুষ্প কলিকে ফুটন্ত পুষ্পে পরিনত করতে। প্রথম ম্যাচেই নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মুগ্ধ করেন সবাইকে। ৫ ওভার বোলিং করে ২৮ রানের শিকার করেন ২ উইকেট, আর ব্যাট হাতে করেন ৫৪ বলের বিনিময়ে করেন ৩৬ রান।

তবে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ হাজার রান পূর্ণ করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। রান সংখ্যা ৯৯১৫, উইকেট ১৬৩ এবং ক্যাচ ১৫৮। সংখ্যাগুলো খুব বড় না, চমকপ্রদও না। দেশের ক্রিকেটে রিয়াদের অবদানও এতে বোঝা যাচ্ছে না। মনে হতেই পারে গড়পড়তা পারফরম্যান্স।

কিন্তু খেলা যেখানে ক্রিকেট, পরিসংখ্যান সেখানে সংখ্যা মাত্র! ক্রিকেট পরিসংখ্যান নয়, ইমপ্যাক্ট খুঁজে। পরিসংখ্যানের সংখ্যায় কি আর সব বাস্তবতা ফুঁটে উঠে? গল্পের পেছনেও তো গল্প থাকে। যেই গল্পই সেরা করে তুলেছে রিয়াদকে। বাংলার ক্রিকেটে রিয়াদের অবদানের বিশালতা বোঝাতে একটা তথ্য হয়তো যথেষ্ট হতে পারে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩৬০৯ জন। তবে মাহমুদউল্লাহর চেয়ে ‘রান, উইকেট আর ফিল্ডার হিসেবে ক্যাচ’ তিন ক্ষেত্রেই বেশি অবদান নেই আর একজন ক্রিকেটারেরও! অর্থাৎ তার অভিষেকের পর থেকে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তাকে পেছনে ফেলতে পারেননি কেউ।

যাই হোক, ময়মনসিংহের মাটিতে ১৯৮৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, তথা আজকের এইদিনে বাবা উবায়দুল্লাহ আর মা আরাফাত বেগমের মুখে হাসি ফুটিয়ে পৃথিবীতে আগমন হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। সেদিন মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। তবে আজ তিনি গোটা একটা দেশ এবং ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন।

শুভ জন্মদিন দ্য ক্রাইসিস ম্যান ‘মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *