মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় দুইটি আসনেই পরাজিত হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে (হিরো আলম)। জয়ের মালা উঠলো না তার গলায়। তবে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি। এই আসনে একতারা প্রতীকে তার ভোট ছিলো ১৯ হাজার ৫৭১ টি। ২০ হাজার ৪০৫ টি ভোট পেয়ে এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন।
এদিকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ২৭৪ টি। ৪৯ হাজার ৩৩৬ টি ভোট পেয়ে এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু।এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টা থেকেই বগুড়ার এই দুটি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ চলে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত।
পরে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম বগুড়া-৬ ও ৪ আসনের ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। এর আগে বগুড়ার দুই আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। কিন্তু ভোটার তালিকায় গরমিল থাকার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র প্রথমে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, পরে নির্বাচন কমিশন থেকেও বাতিল করা হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন হিরো আলম। পরে হাইকোর্টের রায়ে তিনি দুই আসনেই তার প্রার্থিতা ফিরে পান। ১৮ জানুয়ারি তিনি একতারা প্রতীক পান।
বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা হিরো আলম এক সময় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা (ডিশ সংযোগ) করতেন। ২০০৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি মডেলিংয়ে যুক্ত হন। এরপর নিজের অভিনয় ও গানের দৃশ্য রেকর্ড করে ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচার করতে থাকেন। এতে নিজ এলাকার লোকজনের কাছে জনপ্রিয়তা তৈরি হয় তার। ওই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য পদে পরপর দুবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন।
২০১৬ সালে তিনি ‘হিরো আলম’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ খুলে তাতে অভিনয় ও গানের দৃশ্যগুলো ছড়িয়ে দিতে থাকেন। পরবর্তীতে সরব হন ইউটিউবেও। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা হিরো আলম ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। তবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে তিনি ওইদিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ঘোষিত ফলে দেখা যায়, সিংহ প্রতীকে ভোট পড়ে ৬৩৮টি।
দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বলে বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ আসনের বিএনপি দলীয় দুই সংসদ সদস্য ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপর নির্বাচন কমিশন আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে। ১৮ ডিসেম্বর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি আসন দুটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বগুড়া—৬ সদর আসনে আ’লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু, জাপার নুরুল ইসলাম ওমরসহ জাসদ স্বতন্ত্র মিলে মোট ১১ জন প্রার্থী ছিলেন। এই আসনে ভোটকেন্দ্র ১৪৩ টি এবং মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭শত ৪৩ জন।
বগুড়া—৪ (কাহালু—নন্দীগ্রাম) আসনে জাসদের রেজাউল করিম তানসেন, জাপার শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুকসহ স্বতন্ত্র মিলে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই আসনে ভোট কেন্দ্র ১১২ টি এবং মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪শ ৬৯ জন।