গাজীপুর: গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির গাড়ি থেকে আটক এড. দিলারা সুলতানা সেতু(২৮) কে আলোচিত রুপা হত্যা মামলা সহ দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। নিম্ন আদালতে মামলার নথি না থাকায় শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি।
শুক্রবার(১২ জুন) গাজীপুরের বিশেষ আদালতের বিচারক মনোয়ারা বেগম ওই আদেশ দেন।
বৃহসপতিবার সন্ধ্যায় আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে আটক হন গাজীপুর বারের আইনজীবী এড. দিলারা সুলতানা সেতু(২৮)। শুক্রবার বিকালে আলোচিত রুপা হত্যা মামলা সহ দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। দু্টি মামলার মধ্যে রুপা হত্যা মামলায় ৭দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। কিন্তু মামলার নথি উচ্চ আদালতে থাকায় শুনানী করতে না পেরে বিচারক সেতুকে জেল হাজতে পাঠায়।
আসামী পক্ষে প্রায় শতাধিক আইনজীবী শুনানীতে অংশ গ্রহন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম।
গ্রেফতার হওয়া মহিলা আইনজীবী সেতুর পিতার নাম দেলোয়ার হোসেন। বাড়ি গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকায়। আটক আইনজীবী গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যককরী পরিষদের সাবেক নির্বাহী সদস্য।
আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত চলাকালে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির একটি টিম আদালতে যায়। গাজীপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ডিবি পুলিশ এড. সেতুকে ঘিরে ফেলে। আটক হতে পারেন আশংকায় এড. সেতু আত্মরক্ষায় আদালতের স্বরনাপন্ন হয়। এসময় সংবাদ পেয়ে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি দেওয়ান মোঃ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন চীফ জুডিশিয়াল আদালতে যায়। অতঃপর বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টিগোচর করলে চীফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক আল সাদ জগলুল হোসেন পুলিশের নিকট এড. সেতুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। পুলিশ আটকের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে না পারায় বিচারক মামলা ছাড়া সেতুকে আটক না করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিচারক আদালত শেষে এ্যাড, সেতুকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদককে নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এড. সেতুকে নিয়ে সভাপতির গাড়িতে করে আদালত থেকে রওনা হয়। আদালত থেকে বের হওয়ার পর গাজীপুর শহরের গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজের সামনে ডিবি পুলিশ সেতুকে বহনকারী গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতির ব্যাক্তিগত গাড়ির গতিরোধ করে। অথঃপর গাড়ি থেকে নামিয়ে ডিবি পুলিশ এড. সেতুকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বাঁধা দিলে ডিবি পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে গাড়ি চালক জাকির হোসেন(২৪) এগিয়ে এলে ডিবি পুলিশ গাড়ি চালক জাকিরকে মারধর করে ।জাকির হোসেন বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে চিকিৎসাধীন।
এদিকে আইনজীবী আটকের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে গিয়ে পুলিশের আক্রমনের শিকার হন দৈনিক দিনকালের স্টাফ রিপোর্টার দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার হোসেন জানান, ডিবি পুলিশ ছবি তোলার সময় তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ওই গুলো ফিরত দেয়। তবে ক্যামেরা থেকে ছবি গুলো ডিলিট করে দেয় ডিবি পুলিশ।
গাজীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আঃ মমিন জানিয়েছেন, মামলার আসামী হিসেবে একজন নারী আইনজীবী আটক হয়েছেন। এই ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এড. সেতুর পিতা দেলোয়ার হোসেন একটি জমি সংক্রান্ত ঘটনার মামলায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার, ডিবি ও সদর থানার ওসি ও ৫ পুলিশ কর্মকর্তা সহ ৭জনের বরিুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রীট মামলা দায়ের করেন। চলতি বছরের ৩ মার্চ ইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আমির হোসাইনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রীটের পরিপ্রেক্ষেতে ৪ সপ্তাহের রুল জারী করে। কিন্তু বিবাদী পক্ষ রুলের জবাব দেয়নি। ফলে আদালত আগামী ১৪ জুন রোববার এসপি, দুই ওসি ও অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তা সহ ৭জনকে স্বশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।