এইচ এম এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত মন্তব্যে সংসদে জাপা-আ.লীগের হট্টগোল

Slider রাজনীতি


জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে—সরকারি দলের এক সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে এ পরিস্থিতি তৈরি জয়। মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। সংসদে হৈ চৈ শুরু হয়।

এ সময় সংসদে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক টুকু পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। পরে তাৎক্ষণিক সভাপতির চেয়ারে এসে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ পর্যায়ে স্পিকার উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তথ্যগত কোনো ত্রুটি থাকলে তা পর্যবেক্ষণ করে এক্সপাঞ্জ করার রুলিং দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার ফ্লোর পান লালমনিরহাট-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘আমাকে ছয়বার সংসদে এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করতে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রথমবার ৫৫ হাজার ভোটে জিতেছি। গতবার জিতেছি দুই লাখ ৫৫ হাজার ভোটে। গত ভোটে (২০১৪) আমার স্ট্রং প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি মাত্র সাত হাজার ভোট পেয়ে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল হাতিবান্ধা-পাটগ্রামে। আরও একবার আমি সংসদ সদস্য হতে পারতাম। আগের দিন আমি জিতেছি দুই হাজার ৭০০ ভোটে। পরের দিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে দাই হাজার ২০০ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। তার ফলে গতবার আমার এলাকার ভোটার উনাকে জানিয়ে দিয়েছেন তার অবস্থাটা কী?’

মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের শুরুতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সংসদে ছিলেন না। তবে, তার বক্তব্যের আট মিনিটের মাথায় ফিরোজ রশীদ দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় মোতাহার হোসেন থেমে যান। কিছুক্ষণ পর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার তাঁকে বসতে বলেন এবং পরে চাইলে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেবেন বলে জানান। তবে, তাতে তিনি নিবৃত না হলে মাইক ছাড়াই কথা অব্যাহত রাখেন। এ সময় সংসদে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে যায়।

মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আপনি সিনিয়র সংসদ সদস্য। আমার সময়ে আরেকজন বক্তৃতা দেবেন কীভাবে?’ এ সময় স্পিকার মোতাহার হোসেনের মাইকও বন্ধ করে দেন।

পরে কাজী ফিরোজ রশীদকে এক মিনিটের জন্য ফ্লোর দেন। তিনি এক মিনিটের মতো কথা বলেন। তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি পরে সময় নিয়ে যদি কোনো বক্তব্য থাকে বলবেন। ঠিক এ সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙা দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার মোতাহার হোসেনকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। একইসঙ্গে বলেন, ‘আমি রাঙা সাহেবকে একটু শুনি।’

রাঙ্গা ফ্লোর পেলে এবার সরকারি দলের সদস্যরাও চিৎকার-চেচামেচি শুরু করেন। তিনি ফ্লোর নিয়েই বলেন, ‘চলে যাব। চিৎকার আর দরকার নেই, আমরা চলে যাব।’ পরে তিনি এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত ইস্যুর ব্যাখ্যা দেন। একপর্যায়ে, তাঁর মাইক বন্ধ হয়ে যায়। ডেপুটি স্পিকার তাঁকে বসতে বলেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ করে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনারা পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলবেন। সময় দেওয়া হবে। আপনি বসুন। তার (মোতাহার হোসেন) বক্তব্য শেষ হোক। তবে ডেপুটি স্পিকারের কথায় কর্ণপাত না করে জাতীয় পার্টি এমপিরা চিৎকার করতে থাকেন। এ পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, আপত্তিকর কিছু থাকলে তা এক্সপাঞ্জ করা হবে। আর পয়েন্ট অব অর্ডারে অন্য সুযোগে আপনি কথা বলবেন। আপনারা বসেন আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে সুযোগ দেব।’

মোতাহার হোসেনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি এজেন্ডার ওপরে কথা বলবেন। এমন কথা বলবেন না যাতে সংসদ পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটে এবং তার বক্তব্য শেষ করার জন্য ফ্লোর দেন। ঠিক এই সময়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তড়িঘড়ি করে হাউসে প্রবেশ করে সভাপতির আসনে বসেন।

স্পিকার হাউসে ঢুকে সবাইকে বসতে বলেন। বিরোধী দলের কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমানের রাঙার নাম উল্লেখ করে বসতে বলেন। তিনি বলেন, ‘হাউসের একটি ডেকোরাম আছে। এখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হচ্ছে। এখানে একজন বক্তা তাঁর বক্তব্য রাখছেন। সেই বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে সেটা আপনারা উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু এ জন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

এ সময় মোতাহার হোসেনকে দেওয়া ১০ মিনিট শেষ হলে স্পিকার তাকে আরও ১/২ মিনিট কথা বলার জন্য ফ্লোর দেন। ফ্লোর পেয়ে তিনি এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত বিষয়ে আগের বক্তব্য ডিপেন্ড করে আবারও বক্তব্য রাখেন। বলেন, ‘উনারা (জাপা) যে প্রশ্নটি তুলেছেন ১৯৮৫ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। সেবারও উনাদের ক্যান্ডিডেটের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। নব্বই সালে আমি আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াই। তখনও উনাদের ক্যান্ডিডেটের জামানত আমি বাজেয়াপ্ত করি। এবং শেষবার ভোটে.. উনারা সবাই ছিল, রাঙা ছিল। ওই বরিশালের রুহুল আমিন হাওলাদার ছিলেন এবং এরশাদ সাহেবের ভাইও ছিলেন ঢাকা এয়ারপোর্টে। আমাকে এরশাদ সাহেবই প্রশ্নটা তুলেছিলেন তুমি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করে দিলে। আমি বলেছিলাম—আগেও দুই বার করেছি, এবারও করলাম। আমি তো এখানে অসত্য, মিথ্যা কথা বলিনি। আমি খুব কষ্ট পাইলাম।’

এরপর মসিউর রহমান রাঙাকে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেন স্পিকার। তিনি বলেন, ‘আমরা মাগরিবের নামাজের পর বাইরে ছিলাম। ওখান থেকে আমরা শুনলাম উনি বলছিলেন—হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করে আমি এই সংসদে এসেছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পরাজিত করে উনি সংসদে এসেছেন এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আপনি এটা এক্সপাঞ্জ করে দেবেন।’

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি আমাদের মাঝে নেই। একজন মৃত ব্যক্তির নামে এ ধরনের কুৎসা রটানো হচ্ছে।’

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি আমাদের মাঝে নেই। একজন মৃত ব্যক্তির নামে এ ধরনের কুৎসা রটনা উচিত নয়। মোতাহার সাহেবের ভালো করে জানা উচিত এরশাদ সাহেব রংপুরের মাটিতে কোনোদিনও হারেননি। তিনি কারাগারে থেকে ৫টি আসনে জয়লাভ করেছেন। ২২টি আসনে একা প্রার্থী হলে সবটিতে জয়ী হতেন। তিনি কারাগারে থেকে দুইবার ৫টি করে আসনে জয়ী হয়েছেন।’

মোতাহার হোসেনকে উদ্দেশ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘উনি এতবড় বীর বিক্রম হয়ে গেল? এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হলো। এরশাদ সাহেবের জামানত রংপুরে বাজেয়াপ্ত করার মতো সন্তান রংপুরে আজ পর্যন্ত জন্ম নেয়নি। তার নামে কথা বলার আগে অনেকবার চিন্তা করা দরকার ছিল। দৃষ্টতার একটি সীমা থাকে। এটা সম্পূর্ণ এক্সপাঞ্জ চাই। আমাদের দাবি এটা এক্সপাঞ্জ করবেন। না হলে রংপুরের মাটিতে তার অসুবিধা হবে।’

পরে স্পিকার মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে তথ্যগত ত্রুটি থাকলে পরীক্ষা করে এক্সপাঞ্জ করা হবে বলে রুলিং দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *