ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন বলেছেন, লাখ লাখ টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে পঙ্গুত্ব কিনে বাড়ি ফিরলাম। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে হোঁচট খেয়ে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম সেদিন রাতেই। এক্সরে করে দেখতে চেয়েছিলাম হাঁটুর লিগামেন্টে কিছু হলো কি না। হিপ জয়েন্টে কোনও ব্যথা ছিল না আমার। হিপ জয়েন্ট ডাক্তাররা পরীক্ষা করেও দেখেননি। কিন্তু এক্সরে করে বলে দিলেন আমার হিপ ভেঙেছে, রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। তারপর তো ডাক্তারদের ওপর শতভাগ বিশ্বাস, আমার অজস্র নির্বুদ্ধিতা, আমাকে ওদের ভিক্টিম করেছে।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে এসব কথা বলেন তিনি।
পোস্টে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, প্রথম এক্সরে রিপোর্ট হাতে পেয়েছি, ওরা রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলে নতুন করে লেখার আগে। প্রথম রিপোর্টে লেখা ছিল, পুরোনো একখানা ফ্র্যাকচার দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ, পুরোনো একখানা ফ্র্যাকচার যেটা কোনও এক কালে ঘটে নিজে নিজেই হীল হয়ে গিয়েছিল। এরকম থাকে শরীরে। হীল হয়ে যাওয়া পুরোনো ফ্র্যাকচারকে আড়াল করে আমাকে নতুন ফ্র্যাকচারের গল্প শুনিয়ে তারা শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরেই তড়িঘড়ি আমার টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করে দিল।
তিনি লিখেন, সবচেয়ে হাস্যকর জিনিস, ইমার্জেন্সিতে গিয়ে আমি যা বলেছি, আমার হাঁটুর ব্যথার কথা, সেটি সম্পূর্ণ ডিলিট করে দিয়ে ডিসচার্জের সময় নতুন করে হিস্ট্রি লিখে দিয়েছে, যেখানে হাঁটু শব্দটিই নেই, আছে হিপ হিপ হিপ। আমি নাকি হিপ জয়েন্টের যন্ত্রণায় কাতরেছি, আমার হিপ জয়েন্ট নাকি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বাহ, কী সুন্দর হিস্ট্রি পাল্টে দেওয়া হলো। মূল হিস্ট্রি গায়েব।
পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, আমাকে এখন এই ভেবে সান্ত্বনা পেতে হবে, যেদিন হোঁচট খেয়েছিলাম, সেদিন হয়তো আমার মাথা মেঝেতে লেগে ফেটে যেতে পারতো, আমি মরে যেতে পারতাম। আমার হিপ জয়েন্ট আর ফিমার গেছে চিরতরে, আমার জীবন আর আগের জীবন নেই, আমার চলাফেরা স্লথ হবে যদি কোনওদিন হাঁটতে পারি, স্থবির জীবনে অজস্র রোগশোক এসে বাসা বাঁধবে, কিন্তু আপাতত বেঁচে তো আছি। এইবা কম কিসে!