গাজীপুর: দুই বছর করোনার ধাক্কা সামলে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখ লাখ মুসল্লিরঢল নামায় একদিন আগেই মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে দিয়েছেন মুরব্বীরা।
মুসল্লিরা বলছেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভ, বিশ্বের হানাহানি বন্ধ এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় দোয়া করবেন তারা। মুসল্লীদের জমায়েত হয়ে যাওয়ায়
১ম পর্ব নির্ধারিত তিন দিনের পরির্বতে চার দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এখন ঘন কুয়াশা কিংবা শীত, কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি আল্লার নৈকট্য লাভের ইচ্ছের কাছে। তাইতো লাখো মানুষের পদভারে মুখর তুরাগের ১৬০ একর এলাকা। কথা ছিল শুক্রবার ফজরের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের ইজতেমা। কিন্তু মানুষের ঢল দেখে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) যোহরের পর কাকরাইল সূরাহ সদস্য মাওলানা রবিউল হক সাহেবের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমা।
বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিদের সংখ্যাও বেড়েছে। ধীরে ধীরে ভরে উঠেছে ইজতেমার মাঠ। শুধু আজ না, কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তুরাগমুখী জনস্রোত। বুধবার রাতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় ইজতেমার মূল ময়দান।
ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস-ট্রাকে ইজতেমায় যোগ দিতে মুসল্লিরা তুরাগতীরে এসেছেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা আর সব মানুষের মঙ্গলের জন্য দোয়া চাইছেন।
এদিকে, লাখো মানুষের ঢল মাঠ উপচে গিয়ে পড়েছে আশপাশের সবগুলো সড়ক-মহাসড়কে। যে কারণে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে বহু মানুষকে। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ও লাগছে। যদিও পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছে। কিন্তু আবদুল্লাপুর-টঙ্গী সড়কে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সড়ক
সংকুচিত। ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সড় যানজট রোধে এক দিন আগেই আশুলিয়ার টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের প্রবেশ পথ
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ঢাকার প্রবেশ মুখ ট্রাফিক পুলিশের রেকার দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়।
এদিকে, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকা থেকে ইপিজেট পর্যন্ত ঢাকাগামী লেনে প্রায় দুই কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। যানজটে আটকা পড়েছে ইজতেমার উদ্দেশ্যে যাওয়া মুসল্লিরা।
আশুলিয়ার বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো: জাহিদ হোসেন বলেন, ইজতেমার জন্য মহাসড়কটিতে অনেক চাপ পড়েছে। তাই আপাতত এই সড়কটির প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ ও কামারপাড়ার দিকে চাপ কমে গেলে সড়ক স্বাভাবিক করে দেয়া হবে।
তিনি এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহনের স্টাফদের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করা জন্য অনুরোধ জানান।
নিরাপত্তা জোরদার
বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা নিরাপদে ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন সবার সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা একযোগে কাজ করছি’।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বিদেশি মেহমানদের আবাসস্থল পরিদর্শন এবং বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা পরিকল্পনা’ পুস্তকের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাবলীগের মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যারা মাঠের ভেতর পৌঁছাতে পেরেছেন তারা জেলাভিত্তিক স্থান বা খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। নিজেদের থাকা ও খাবারের সব ব্যবস্থা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন তারা।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বৃহস্পতিবার দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
এদিন বাদ জোহর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর থানার হরিপুরের হেমুবটে পাড়া এলাকার মো ফজলুল হকের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৩)।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে তাবলিগ জামাতের গাজীপুর মারকাজের সুরা সদস্য আবু তৈয়ব সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন। আর নুরুল হক ভুগছিলেন অ্যাজমা রোগে।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৬তম ইজতেমার প্রথমপর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাত হবে ২২ জানুয়ারি।