ঢাকা: ওমরার নামে সৌদি আরবে প্রায় ১০ লাখ লোক পাচারের অভিযোগে দেশটিতে ওমরা ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও ধর্মসচিব চৌধুরী বাবুল হাসান মানবপাচারের দায় থেকে হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলদেশ (হাব) নেতাদের বাঁচাতে চান বলে অভিযোগ উঠেছে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমন অভিযুক্তদের ফৌজদারি আইনে মামলার প্রতিশ্রুতি দিলেও ধর্মসচিব বলছেন, মানবপাচার আইনে মামলা করা যাবে না। কারণ তারা লিগ্যাল ভিসায় গেছেন। তবে ফেরত আসেননি।
সোমবার (৮ জুন) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ধর্মমন্ত্রী।
অপরদিকে, ধর্মসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা সবাই জানেন মানবপাচার আইনে মামলা করা যাবে না।
তবে ২০১২ সালের মানবপাচার আইনের প্রথম অধ্যায়ে ৩ (১) ধারায় বলা হয়, ‘মানবপাচার’র অর্থ কোনো ব্যক্তিকে-
(ক) ভয়ভীতি প্রর্দশন বা বলপ্রয়োগ করিয়া; বা (খ) প্রতারণা করিয়া বা উক্ত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোন অসহায়ত্বকে (vulnerability) কাজে লাগাইয়া; বা (গ) আর্থ বা অন্য কোন সুবিধা (kind) লেনদেন-র্পূবক উক্ত ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ রহিয়াছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করিয়া; বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের (exploitation) উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকাইয়া রাখা বা আশ্রয় দেওয়া (harbour))।
এই ধরায় ব্যাখায় বলা হয়- ব্যাখ্যা। – এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে প্রতারণার মাধ্যমে, অসৎ উদ্দেশ্যে এবং বাধ্যতামূলক শ্রম বা ‘সার্ভিচিউড’(servitude) বা ধারা-২ এর উপ-ধারা (১৫) এ বর্ণিত কোনো শোষণ বা নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির শিকার হইতে পারে মর্মে জানা থাকা সত্বেও অন্য কোন ব্যক্তিকে কাজ বা চাকরির উদ্দেশ্যে গমন, অভিবাসন বা বহির্গমন করিতে প্রলুব্ধ বা সহায়তা করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কর্ম উপ-ধারা (১) এ সংজ্ঞায়িত ‘মানব পাচার’ এর অন্তর্ভুক্ত হইবে।
আইনের এ বিষয়টি ধর্মসচিবের জানা থাকলেও সোমবারের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, মানবপাচার আইনে মামলার সুযোগ নেই। তবে গত ২৮ মে সৌদি আরবের ওমরা বিষয়ক উপমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ধর্মসচিব ‘মানবপাচার’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান ওই চিঠিতে। চিঠিতে ধর্মসচিব পাচারকারি ওমরা এজেন্টদের নাম ঠিকানাও চেয়েছেন জরুরিভাবে।
এ বিষয়ে ধর্মসচিবের কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সৌদি আরবের এজেন্সিগুলো বলেছে, মানবপাচার। আমাদের হজ কাউন্সেলরও মানবপাচার বলেছেন, তাই আমি চিঠিতে মানবপাচার লিখেছি। তবে মানবপাচার আইনে মামলার সুযোগ নেই।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাব সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহারের মালিকাধীন এজেন্সি মেগাটপ ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল (প্রাঃ) লিমিটেড, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হেলালের মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সহ-সভাপতি ফরিদ আহমদ মজুমদারের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং যুগ্ম-মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন কামালের হাসিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচার করেছে।
মানবপাচারকারি হিসেবে অভিযুক্ত তালিকায় রয়েছেন হাবের নির্বাহী সদস্য এন এম এইচ খাদেম দুলালের খাদেম এয়ার সার্ভিস, আবু বাকর সিদ্দিকীর আল নূর ইন্টারন্যাশনাল, আবুল মালেকের সবুজ বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, হাব চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি মো. ইলিয়াসের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং হাব সভাপতির জামাতা হাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব মান্নানের টাইমস এভিয়েশন।
এছাড়া ৬৫ এজেন্সির মাধ্যমে ওমরার জন্য পাঠানো লোকের মধ্যে মোট ১০ হাজার ১৩০ জন ফেরত আসেনি। হজ কাউন্সেলরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী প্রথম দফায় ৩ হাজার ৯২৭ জন, দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৭২৭ জন এবং তৃতীয় দফায় ৪ হাজার ৪৭৬ জন।
আর আগে হাবের এসব নেতাদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগে মামলার কথা জানিয়েছিলেন যুগ্ম-সচিব (হজ) হাসান জাহাঙ্গীর আলম। পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিলের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে সর্বশেষ সোমবারের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সচিব চৌধুরী বাবুল হানান জানান- মানবপাচার আইনে মামলার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি হজ এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সচিব অপকর্মে জড়িত এজেন্সিকে বাঁচাতে চান। সে কারণে বলেছেন মামলার সুযোগ নেই। হজ এজেন্সির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললেও তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।