আমরা আর মুক্তি চাইব না, মুক্ত করব: গয়েশ্বর

Slider রাজনীতি


ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি না চেয়ে তাদের মুক্ত করবেন বলেও জানান তিনি।

গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা আর আমাদের নেতাদের মুক্তি চাইব না, এখন তাদেরকে মুক্ত করব। আমরা গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ সকল নেতাকর্মীদের আমার মুক্ত করব।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও জাতীয়তাবাদী ফোরাম।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে পারলে বাংলাদেশ মুক্ত হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা মুক্ত হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষ গণতন্ত্র চায়। জনগণ তার ভোট নিরাপদে কেন্দ্রে গিয়ে দিতে চায়। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে পারলে বাংলাদেশ মুক্ত হবে। মানুষ ভোট দিতে পারবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আদালত, সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনার কথায় চলে। সকালে শেখ হাসিনা যা বলেন দুপুরে আদালত তাই করেন। ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদরা টেলিভিশনে যা বলেন আদালতে সেই মোতাবেকই রায় হয়। এসব দেখেই বুঝা যায় আদালত স্বাধীন নয়। স্বাধীনভাবে তারা কাজ করতে চায়ও না। সে কারণে আমাদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। ফ্যাসিবাদ সরকার কখনো নিরস্ত্র জনগণের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকতে পারে না। আগেও পারেনি। হিটলার, ইয়াহিয়া কেউই পারেনি। শেখ হাসিনার পতন অনিবার্য।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা আমাদের নেতাদের মুক্তি কার কাছে চাইব। তিনি আমাদের দলের শীর্ষনেতাদেরকে ধরেছেন, তিনি তো ছাড়বেন না। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত একবার বলেছিলেন, বাঘে ধরলে ছাড়ে; হাসিনা ধরলে কাউকে ছাড়ে না। তাই এই সরকারের কাছে মুক্তি চেয়ে লাভ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশ নিয়ে সরকার অমানবিক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমাদের নেতা ডা. জাহিদের কাছে সমাবেশ করার অনুমতিপত্র দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে রাতের অন্ধকারে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। নানা নাটকীয়তার পরে জেলখানায় পাঠায়। তাদেরকে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে জেলে পাঠানো হয়েছে। অথচ মামলার এজাহারে তাদের নাম ছিল না। তারপরও নিম্ন আদালতে তাদের জামিন মিলেনি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আদালতকে একটি কথাই বলতে চাই, আমরা ন্যায়বিচার চাই। যাদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে, তাদের নিয়ে আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমরা করুনা চাই না। এতদিন আমরা ন্যায়বিচার পাই নাই।’

খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পায়নি উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমাদের নেত্রী ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন। তার উপর ন্যায়বিচার করা হয়নি। অবিচারের সম্মুখিন হয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে খালেদা জিয়া ব্যতীত এমন কোনো নজির নেই যে, এ সংক্রান্ত মামলায় কেউ জামিন পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কার কাছে বিচার চাইব। বিচার বিভাগ যদি আলাদা হতো, বিচারপতিরা যদি বলতে পারতো যে তারা স্বাধীন। তাহলে আমরা ন্যায়বিচার পেতাম। কিন্তু এখন আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আর আমাদের নেতাদের মুক্তি চাইব না, এখন তাদেরকে মুক্ত করব। আমরা গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ সকল নেতাকর্মীদের আমার মুক্ত করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের বাধা শেখ হাসিনা। তিনি যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবেন, ততক্ষণে পুলিশ, র‌্যাব, আদালত, প্রশাসন বাধা থাকবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে পুলিশ জনগণের পক্ষে কাজ করবে। পুলিশ আর কখনো জনগণের উপর অত্যাচার করবে না। জনগণের খাদেম হিসেবে কাজ করবে। এ কারণে আমরা বলছি, আগামী সুষ্ঠ নির্বাচনের একমাত্র পথ হচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সরকার পদত্যাগ করলেই খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ সকল কারাবন্দীর মুক্তি মিলবে।’

সংগঠনের সভাপতি সোহেল রানার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি নেতা আমিরুল ইসলাম খান আলিম, মীর নেওয়াজ আলী, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ওমর ফারুক সাফিন, কামাল আনোয়ার আহম্মেদ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *