পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ জানুয়ারি। কে তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তা নিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে জোর জল্পনা-কল্পনা চলছে। বর্তমান আইজিপির চাকরির মেয়াদ বাড়ছে নাকি নতুন কোনো মুখ আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। আর এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান আইজিপির মেয়াদ বাড়ানো কিংবা নতুন কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে আইজিপির দায়িত্বে বসানোর ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে টালমাটাল হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দূরদৃষ্টি এবং ঠাণ্ডা্ মাথায় মোকাবিলা করার মতো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই আইজিপি হিসেবে খোঁজা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নতুন আইজিপি হিসেবে জোর আলোচনায় রয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) মনিরুল ইসলাম, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন। আবার বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মেয়াদ বাড়তে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। তার মেয়াদ বাড়ানো হলে পুলিশ বাহিনীতে নতুন নজির সৃষ্টি হবে।
একটি সূত্র বলেছে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। এ সপ্তাহেই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
অপর একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, এর আগে পুলিশে কোনো আইজিপিকে চুক্তির ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। এই হিসাবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো নাও হতে পারে। তবে বর্তমান আইজিপি চুক্তিভিত্তিক একই পদে নিয়োগ পাচ্ছেন বলে গত দুই দিন ধরে পুলিশে জোর আলোচনা হচ্ছে। সজ্জন ব্যক্তি এবং সৎ কর্মকর্তা হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিশেষ সুনাম রয়েছে। তিনি র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি প্রশাসন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি, সিআইডি প্রধানসহ পুলিশের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বর্তমান আইজিপির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
নতুন আইজিপি হিসেবে সবচেয়ে বেশি নাম শোনা যাচ্ছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিনের। এই দুজনের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি মো. কামরুল আহসান বর্তমান পদে আসার আগে এটিইউর প্রধান ছিলেন। তিনি শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন এবং ট্রেনিং), সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এটিইউ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন সিএমপির ডিসি, সিলেট জেলার এসপি, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের নামও নতুন আইজিপি হিসেবে আলোচনায় আছে। তিনি নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি সাউথ, গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোয়েন্দা পুলিশ এবং ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ দক্ষ এই পুলিশের কর্মকর্তার হাতেই গঠিত হয় সিটিটিসি। এ ছাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আগে-পরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির বড় বড় জঙ্গি আস্তানা তার নেতৃত্বেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃস্থানীয়দের গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সজ্জন ব্যক্তি ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার বিশেষ সুনাম রয়েছে। তবে আইজিপি হওয়ার দৌড়ে তার কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।