গাজীপুর: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, `সকলেই জানেন এই জায়গা (ইজতেমা ময়দান) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাবলীগ জামাতকে বরাদ্ধ দিয়েছেন। কিন্তু ওয়েব সাইটে নাকি দেখা যায়, অন্য কিছু! লেখা আছে নাকি বেগম খালেদা জিয়া এই জায়গা ইজতেমাকে দিয়েছেন। ভুল তথ্য জাতির সামনে থাকবে এটা ঠিক নয়। কোনো ক্রমেই এটা সত্য নয়।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) আসন্ন ইজতেমার নিরাপত্তা সংক্রান্তে ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী ওই সময় উপস্থিত কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি চেক করে দেখতে বলেন। তখন দেখেন ওয়েব সাইটে প্রকাশিত বিশ্ব ইজতেমার জায়গা বরাদ্ধ সংক্রান্তে বেগম খালেদা জিয়ার নাম। পরে মুছে ফেলার পরামর্শ দেন। একইসাথে তিনি জানতে চান, ইজতেমার নিজস্ব কোনো ওয়েবসাইট আছে কিনা।
এ সময় সভায় উপস্থিত তাবলীগ জামাতের একজন দায়িত্বশীল মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো ওয়েব সাইট নেই।
প্রতিউত্তরে মন্ত্রী বলেন,`না, আপনাকে বলছি না, আমাদের লোকদেরকে বলছি।`
পরে মন্ত্রী আসন্ন ইজতেমায় মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক তুরাগ নদে ভাসমান সেতুর সংখ্যা পাচঁটি থেকে ছয়টিতে উন্নীত করার দাবি জানালে সভায় উপস্থিত সেনাপ্রতিনিধি পন্টুন বাড়ানোর আশ্বাস দেন।
সোমবার ইজতেমা ময়দানের ছাপরা মসজিদ প্রাঙ্গনে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-জিএমপি আয়োজিত এ সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। সভায় সভাপত্বি করেন জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
সভায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো: আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডলসহ ইজতেমা আয়োজন সংক্রান্তে সম্পৃক্ত সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধি ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ওয়েব সাইটে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদের লিঙ্ক, বিএনপির প্রবীণ নেতৃবৃন্দ ও তাবলীগ জামাত সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাতের ঐতিহ্যবাহী বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য ১৯৯৫ সালে ১৬০ একর আয়তনের সুবিশাল ময়দান বরাদ্ধ দেয় তৎকালীন বিএনপি সরকার। বিদ্যমান সরকারি নকশা অনুযায়ী গাজীপুর সদর উপজেলার টঙ্গী থানার মাছিমপুর মৌজার ৯০ দশমিক ৮৮ একর ও টঙ্গী মৌজার ৬৯ দশমিক ১২ একর জমি নিয়ে ইজতেমার মূল ময়দান। যার দক্ষিণ পশ্চিমে তুরাগ নদ, উত্তরে টঙ্গী-আশুলিয়া বাইপাস সড়ক (কামার পাড়া সড়ক), পূর্বে কিছু অংশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং বাকি অংশে কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। যদিও তুরাগ নদের পশ্চিম অংশের জায়গাসহ ইজতেমা ময়দানের বর্তমান আয়তন প্রায় ১৭৫ একর। রাজধানীর উত্তরা বা বর্তমানে তুরাগ থানার রানাভোলা মৌজায় অতিরিক্ত ১৫ একর জমি ইজতেমার কাজে ব্যবহার হলেও এসব জমি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে তাবলীগ জামাতের বিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার ইজতেমা ময়দানে জিএমপি আয়োজিত সমন্বয় সভায় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন, `আগে একসময় ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিত এবং ইজতেমা চলাকালীন সময়ে আশপাশের এলাকায়ও পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এখন আর সেই সমস্যা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইজতেমা ময়দান ছাড়াও টঙ্গীর প্রতিটি ওয়ার্ডে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছেন। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের চারপাশে স্বাস্থ্যসম্মত বহুতল শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।`
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ইজতেমায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, `আওয়ামী লীগ সরকার ইজতেমাবান্ধব সরকার।`
ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকছে সাড়ে সাত হাজার পুলিশ :
সভায় জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জিএমপি পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের ইজতেমা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। একইসাথে সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। দুই ধাপে ইজতেমা আয়োজকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও এবার ইজতেমা আয়োজনে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না বলেও সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ও ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।