ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। কানেক্টিভিটি শুধু দুই দেশের নয়, এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল মিলনায়তনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, সম্মতিপত্র স্বাক্ষর শেষে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের বক্তব্যে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা গুরুত্ব পায়। দুই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় বাংলাদেশের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রশংসা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ছয় বছর ধরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সবগুলো অর্জন করতে পেরেছি। ভারতও আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ। আমরা পরস্পর উন্নয়ন সহযোগী। আজকে এই অপরাহ্নে খুবই ফলপ্রসূ ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আলোচনা ছিল অত্যন্ত গঠনমূলক। আমরা পরস্পরের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে অবগত রয়েছি। দ্বিপাক্ষিক সব বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি উভয়ই এ বিষয়ে সম্মতি হয়েছি যে, কানেক্টিভিটি শুধু দুই দেশের নয় এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
ভারতের সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া বিভিন্ন চুক্তির বিষয় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রটোকল স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে সঙ্গে নতুন বাস সার্ভিসগুলোর উদ্বোধন এ অঞ্চলের সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা আনা সম্ভব। চুক্তিগুলোতে যে নতুন বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে, তার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রসারে নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত ও দ্বার উন্মোচন হবে বলেও তাঁর ধারণা।
মংলা ও ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের দু’দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর সরকারের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সমতা আনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য মংলা এবং ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমরা সম্মত হয়েছি। এর ফলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমরা দ্বিপাক্ষিক বেশ কয়েকটি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। যা আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে রয়েছে-অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও সমুদ্র সম্পদ (ব্লু ইকোনমি।’
হাসিনা বলেন, ‘সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখা এবং এ পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
খুলনা ও সিলেটে ভারতীয় মিশন: শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গোহাটিতে (গুয়াহাটি) বাংলাদেশ মিশন এবং খুলনা ও সিলেটে ভারতীয় মিশন খোলার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। এটা আমাদের ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক বিশ্বাস ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তাঁর মতে, এসব পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গণমুখী করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার জন্য যে অঙ্গীকার করেছি, তা সফর শেষে যৌথ ঘোষণায় প্রকাশ পাবে। আমাদের এই যৌথ ঘোষণার অধিকারগুলোকে বাস্তবে রূপ দান করাই আমাদের সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।’ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি এ ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, (মোদি) আপনার সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন আশা ও গতির সঞ্চার করেছে। ঢাকায় আপনার সফর সফল হোক, আনন্দময় হোক।’