যেখানে সান্তা ক্লজের বাড়ি

Slider সারাবিশ্ব


খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস ডে বা শুভ বড়দিন রোববার (২৫ ডিসেম্বর)। নানা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে উদযাপন করবে এই দিনটি। বড়দিনে এই সম্প্রদায়ের সবার কাছে বিশেষ করে ছোটদের অত্যন্ত প্রিয় একটি চরিত্র সান্তা ক্লজ। তাকে নিয়ে ছোট-বড় সবার মধ্যেই আগ্রহের শেষ নেই। চমৎকার সাজ-সজ্জার এই সান্তা ক্লজ কে, তার বাড়ি কোথায়-এমন অনেক প্রশ্নের জবাব খোঁজে বিশেষ করে এই সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোররা।

খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী আজকের দিনের নয়মাস আগে মাতা মেরির গর্ভে যিশুর জন্ম হয়। ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২ টা বাজলেই বাহারি লাল-সাদা পোশাকে ঝোলায় ভর্তি উপহার নিয়ে হাজির হন সান্তা ক্লজ।

সান্তা ক্লজের সাজ-সজ্জা বেশ চমকপ্রদ। লাল-সাদা পোশাকের সাজে জিঙ্গেল বেলসের সুরে কাঁধে ঝোলাভর্তি উপহার নিয়ে বাড়ি বাড়ি যান সান্তা ক্লজ। সেই উপহার নেওয়ার জন্য শিশুরা ঘুমানোর আগে জানালায় কিংবা ক্রিসমাস ট্রিতে মোজা ঝুলিয়ে রাখে। সান্তা ক্লজ শিশুদের ঘুমের মধ্যেই এই জায়গার যেকোনো একটিতে উপহার রেখে যান। আট-নয়টি উড়ন্ত রেইন ডিয়ার স্লেজগাড়িতে এভাবে যুগ যুগ ধরে ছোটদের খুশি করতে তাদের জন্য উপহারসহ হাজির হন বাড়ি বাড়ি। এমনটাই বিশ্বাস করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শিশুরা।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে আজন্ম প্রশ্ন, এই সান্তা ক্লজ কে? তার বাড়ি কোথায়? সান্তা ক্লজতে পেতে চাইলে যেতে হবে ফিনল্যান্ডে। সেখানেই থাকেন তিনি। বড়দিনের রাতে স্লেজগাড়িতে করে লোকালয়ে আসেন সান্তা।

ইতিহাস আমাদের জানায়, খ্রিষ্টীয় তিন শতকে সান্তা ক্লজের অস্তিত্ব ছিল। তখন তার নাম ছিল নিকোলাস। তুরস্কে জন্ম নেওয়া প্রচুর সম্পত্তির মালিক এই নিকোলাস প্রত্যেকের বাড়িতে হাজির হয়ে শিশুদের উপহার দিতেন। তিনি যেমন অসহায়দের সাহায্য করতেন তেমনি শিশুদেরও উপহার দিতেন। এ কারণে সেসময়ে নিকোলাস সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন।

সান্তাকে নিয়ে এরকম অনেক ইতিহাস পাওয়া যায় বিভিন্ন গ্রন্থে।

সান্তাকে নিয়ে প্রচলিত আছে, তার বাড়ি নর্থ পোলে। সেখানে তার স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ইউরোপের পাশাপাশি আমেরিকাতেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে সান্তাকে নিয়ে যেকোনো খবর শুনতে রীতিমত উম্মুখ হয়ে থাকে শিশুরা।

কেউ কেউ বলেন, সান্তা উত্তর মেরুর তুষারাবৃত কোনো এক দেশের মানুষ।

আসলে তার বাড়ি ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড প্রদেশের কোরভাটুনটুরি পার্বত্য অঞ্চলে। সেখানে যেতে প্রথমে যাওয়া লাগবে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে। সেখান থেকেই ছেড়ে যায় ফিনিশ ডাবল ডেকার ট্রেন। এই ট্রেনটির নাম সান্তা ক্লজ এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে চড়ে বসলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে সান্তা ক্লজের বাড়ি।

কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? সত্যি সত্যি কিন্তু ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েমিতে সান্তার বাড়ি রয়েছে। শুধু বাড়িই নয়, সেখানে রয়েছে তার অফিস, নিজস্ব পোস্ট অফিস এমনকি রেইন ডিয়ার অর্থ্যাৎ বল্গা হরিণের একটি ফার্মও। সান্তার বাড়ি সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে। শুধু সান্তার বাড়িই নয় গোটা গ্রামের গাছপালা, মাঠ, রাস্তা সবকিছুই ঢাকা থাকে বরফে। সান্তার নামেই এই গ্রামের নাম সান্তাক্লজ ভিলেজ।

সান্তার এই বাড়ির উপর দিয়ে চলে গেছে কাল্পনিক আর্কটিক লাইন বা উত্তর মেরু রেখা। এজন্য বছরে একদিন ২২ ডিসেম্বর এখানে সূর্যের যেন ঘুমই ভাঙে না। আবার ২১ জুনে ২৪ ঘণ্টাই সূর্য দেখা যায়। এই দিনটিতে বলা হয় শুভ্রদিন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছবির মত সুন্দর এই গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কয়েকবছর পর আবার এই গ্রামটিকে সাজিয়ে তোলা হয়।ফার্স্ট লেডি ইলিনর রুজভেল্টের উদ্যোগে উত্তর মেরুর এ জায়গাটিতে একটি কেবিনও তৈরি করা হয়। তবে সান্তা ক্লজের বাড়ি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সময় লেগেছে আরও অনেক বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *