ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার সকালে দুইদিনের সফরে ঢাকা আসছেন। এখানে তিনি থাকবেন ৩৪ ঘণ্টা। এই সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির সাক্ষাৎ হবে পাঁচ দফা। এসব সাক্ষাতে তারা এক ডজনেরও বেশি যৌথ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে নরেন্দ্র মোদির কাটবে ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। আর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সান্নিধ্যে নরেন্দ্র মোদির কাটবে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা।
মোদিকে বহনকারী ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সকাল ১০টার দিকে ফুলেল শুভেচ্ছায় তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টারমাকে এই অভ্যর্থনায় থাকবে লাল গালিচা সংবর্ধনা আর বিশেষ গার্ড অব অনার।
সেখান থেকে নরেন্দ্র মোদি যাবেন সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। সাভার থেকে ঢাকা ফিরে তিনি যাবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ধানমন্ডি থেকে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ফিরবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে এই হোটেলেই থাকবেন তিনি।
এই দিন বিকেলেই শুরু হবে নরেন্দ্র মোদির ব্যস্ত কর্মসূচি। বেলা পৌনে চারটায় নরেন্দ্র মোদি পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হবে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম।
শুরুতেই দুই নেতা একযোগে উদ্বোধন কববেন দুই দেশের মধ্যে নতুন চালু হতে যাওয়া দুটি বাস সার্ভিস। ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলং’র এই দুই বাস সার্ভিসের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে এর মাধ্যমে।
এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘গোলাপ’ কক্ষে একান্ত বৈঠক হবে দুই নেতার। ২০ মিনিট এই বৈঠক স্থায়ী হওয়ার কথা রয়েছে।
এরপরপরই দুই নেতাকে দেখা যাবে ‘শাপলা’ হলে। সেখানে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
এরপর কার্যালয়ের ‘শিমুল’ হলে ফের বৈঠকে বসবেন তারা। দুই পক্ষের নির্ধারিতদের অংশগ্রহণে এই বৈঠক চলবে প্রায় চল্লিশ মিনিট।
এরপর দুই নেতা উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে যাবেন ‘চামেলী’ হলে। এখানে প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠকের পর ‘শাপলা’য় আয়োজিত কর্মসূচিতে দুই নেতা দুই দেশের যৌথ স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পরে একই হলে তারা কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ক্ষারক প্রত্যক্ষ করবেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিকে শ্যুভেনির ও উপহারসামগ্রী তুলে দেবেন। অতঃপর দুই নেতা যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে অংশ নেবেন।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিজিটরস বুকে স্বাক্ষর করবেন। এর পরপরই কার্যালয় থেকে মোদিকে বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এর কিছুক্ষণ পর রাত ৮টায় দুই প্রধানমন্ত্রীর আবার দেখা হবে হোটেল সোনারগাঁওয়ে। সেখানে গ্র্যান্ড বল রুমে অনুষ্ঠিত হবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজসভা। রাত সাড়ে ৯টায় এই কর্মসূচি শেষ হবে।
দ্বিতীয় দিন রোববার দুপুরে ফের দুই প্রধানমন্ত্রী যাবেন বঙ্গভবনে। এখানে দরবার হলে তাকে দেওয়া হবে বিশেষ সংবর্ধনা ও মধ্যাহ্ন ভোজ। আর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাত থেকে নরেন্দ্রমোদী গ্রহণ করবেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির জন্য বিশেষ সম্মাননা।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রোববারেও কাটাবেন ব্যস্ত দিন। সকালে তার ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শণে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর দুপুরে বঙ্গভবনের কর্মসূচি সেরে হোটেলে ফিরলে সেখানে তার সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করতে যাবেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের রয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বক্তৃতা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পরপরই তিনি নিজ দেশে ফেরার লক্ষ্যে যাবেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। রাত ৮টা ১০ মিনিটে সেখানে ভিভিআইপি টারমাকে তাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ৮টা ২০ মিনিটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
এদিকে নরেন্দ্র মোদির সফরের একদিন আগেই ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শুক্রবার রাত ৮টা ৩১ মিনিটে ঢাকা পৌঁছান তিনি।
নরেন্দ্র মোদি ও মমতা ব্যানার্জির এই সফর উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক সেজেছে বর্ণিল সাজে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত পুরো রাজপথ জুড়ে শোভা পাচ্ছে মোদি ও মমতার ছবি। রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও। সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের পতাকা। আর রয়েছে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ নিশান।
মোদিকে স্বাগত জানাতে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ব্যানার বসেছে বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজ জুড়ে।