চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অলআউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। ওপেনিং জুটিতে রেকর্ড গড়ে জয়ের আভাস দিচ্ছিলেন দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানেই হার দেখতে হলো টাইগারদের। ভারতের দেওয়া ৫১৩ রানের টার্গেটের জবাবে ৩২৪ রানেই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এর ফলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট ১৮৮ রানে হারল টাইগাররা।
বল হাতে একাই টাইগারদের ধবল ধোলাই করে ম্যাচসেরা হয়েছেন ভারতীয় স্পিনার কুলদীপ যাদব।
এর আগে ৪০৪ রানে থেমেছিল ভারতের প্রথম ইনিংস। তবে ১৫০ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। তবে বাংলাদেশকে ফলো-অনে না পাঠিয়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় ২৫৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অতিথিরা। ফলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ৫১৩ রান।
দুই ওপেনার শান্ত ও জাকির উদ্বোধনী জুটিতে ১২৪ রান তুলে নিলে জয়ের প্রত্যাশা করছিলেন টাইগার সমর্থকরা। সেই আশা আরও দৃঢ় হয় অভিষেক টেস্টে জাকির হাসানের সেঞ্চুরির পর। টাইগারদের হয়ে আর দুই বা একজন কার্যকরী ইনিংস খেললেই জয় নিশ্চিত। কিন্তু বাস্তবে সেই হিসাব মিলেনি।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আগ্রাসী ইনিংসে সেই আশা জাগাচ্ছিলেন। কিন্তু ৬ ছক্কা ও ৬ চারে ৮৪ রানে কুলদ্বীপ যাদবের বলে বোল্ড হয়ে সাকিব প্যাভিলিয়নে ফিরলে সেই আশায় চিড় ধরে।
অধিনায়ক ফিরে গেলে নুইয়ে পড়ে টাইগারদের ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন। মাত্র ৪ রান ব্যবধানেই সাকিবদের দুই উইকেট তুলে ভারতীয় বোলাররা। গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে এবাদত আর দুই অঙ্কের কোটা পেরুনোর আগেই ফিরেন তাইজুল। শেষ পর্যন্ত ১১৩ দশমিক ২ ওভারে অলআউট ৩২৪ রানে। এতে করে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারতীয়রা।
এর আগে শেষ দিনে বিশ্বরেকর্ড গড়ে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে টাইগাররা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অপরাজিত ৪০ রানে ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৯ রান নিয়ে ক্রিজে আসেন। ফলে শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৪১ রান, হাতে ছিল ৪ উইকেট।
অন্যদিকে শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিনা উইকেটে ৪২ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল টাইগাররা। দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিষিক্ত জাকির হাসান প্রথম সেশনে কোনো বিপর্যয় হতে দেননি। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে ‘গোল্ডেন ডাক’ উপহার দেওয়া শান্ত ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন, যেটি তার ১৫ ইনিংস পর ফিফটি।
তবে দ্বিতীয় সেশনে দলীয় ১২৪ রানে উমেশ যাদবের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে দেন শান্ত। স্লিপে থাকা বিরাট কোহলি সেই ক্যাচ মিস করে দিলেও ভাগ্যক্রমে গ্লাভসবন্দী করেন উইকেট-কিপার ঋষভ পান্ত। বিদায়ের আগে ১৫৬ বলে ৭টি বাউন্ডারিতে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত।
প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলার পর সেশনে আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অক্ষর প্যাটেলের বলে ৫ রান করা ইয়াসির আলী রাব্বি বোল্ড হয়ে ফেরেন। এরপর কুলদ্বীপ যাদবের বলে উমেশ যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন ১৯ রান করা লিটন দাসও।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে অভিষেক টেস্টে দারুণ এক ইনিংস খেলে সেঞ্চুরি তুলে নেন ওপেনার জাকির হোসেন। যার ফলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসান রাজুর পর চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
তবে ২২৪ বলে ১৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় কাঁটায় কাঁটায় ১০০ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে স্লিপে থাকা কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর অক্ষর প্যাটেলের এক ওভারে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম (২৩) ও নুরুল হাসান সোহান (৩)।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে এদিন স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ১৭ রান যোগ করতেই ১৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। এই ইনিংসে ভারতের পক্ষে বোলিংয়ে কুলদ্বীপ যাদব ৫ ও মোহাম্মদ সিরাজ ৩ উইকেট নেন।