ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে অপর এক সংগঠনের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ায় তার নিরাপত্তাহীনতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানান।
তারা বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত বুধবার সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে সরকার সমর্থিত ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে একদল লোক পিটার হাস কে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। পরে অনিরাপদ বোধ করায় নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উপপ্রধান মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল এই বিষয়ে উদ্বেগের কথা বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও বিব্রতকর। এই ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা কী? দেশে যে নিরাপত্তাহীনতা চলছে এই ঘটনা তারই নমুনা বলেও উল্লেখ করনে তারা।
নেতৃদ্বয় বলেন, একজন কূটনীতিক একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে আরেক প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে কিছু লোকের উপস্থিতি বেআইনী। যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। কেউ যদি তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান করতে চায় করতে পারে। তবে আরেকটা অনুষ্ঠান গিয়ে সেই অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্থ করার প্রক্রিয়া অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথাও বলেন তারা।
তারা বলেন, এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে নৈশভোজে যাওয়ার পর বের হওয়ার সময় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা হয়। কিন্তু ওই ঘটনার আজো বিচার হয়নি। ফলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, গত প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের মানুষকে নানাভাবে চাপে রেখেছে। দেশে ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে আক্রমণের চেষ্টার ঘটনা প্রমাণ করে যে, ক্ষমতাসীনরা ভয়ভীতির মাধ্যমে বিদেশী কূটনীতিকদেরও চাপে রেখে অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশের জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখন দেখা যাচ্ছে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশী কূটনীতিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বিদেশে বাংলাদেশেরভাবমূর্তিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিবৃতিতে গত বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হেনস্তা চেষ্টার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।