ফাইনালের পথে ফ্রান্সের বাধা আফ্রিকান সিংহ মরক্কো

Slider খেলা


আজ মাঠে নামছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। প্রতিপক্ষ রূপকথা গড়তে আসা আফ্রিকান দল মরক্কো। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় আল বায়েত স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে উভয় দল।

বিশ্বকাপে এবারই প্রথমবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও মরক্কো। যদিও ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এর আগে গত শতকে কিছু ম্যাচ খেলেছিল দল দুটি। অফিশিয়ালি এখন পর্যন্ত দুই দল পাঁচবার পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। দুই দলের প্রথম দেখা হয় ১৯৮৮ সালে, যেখানে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা। আর দুই দলের সবশেষ সাক্ষাৎ হয় ২০০৭ সালে। সেই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ফ্রান্স সার্বিকভাবে এগিয়ে থাকলেও, শেষ সাক্ষাতের ফলাফল আজকের সেমিফাইনালে মরক্কোর জন্য বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে।

১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে খেলা ১৩ দলের একটি ফ্রান্স। এই নিয়ে বিশ্ব সেরার মঞ্চে ১৬ বার খেলছে দলটি। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে তারা জিতে নেয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ২০০৬ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে সেমিফাইনাল খেলছে ফ্রান্স।

২০০৬ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল ইতালি ২০১০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে। আবার ওই আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ২০১৪ সালে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০১৪ আসরের শিরোপা জয়ী জার্মানিরও গত আসরে বিদায় ঘটে গ্রুপ পর্বে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্বে বাদ পড়াটাকে অনেকেই চ্যাম্পিয়নস কার্স বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই চ্যাম্পিয়নস কার্স কাটিয়ে ফেলেছে ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বের বাধা টপকে দলটি খেলছে সেমিফাইনাল।

১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে খেলতে যাচ্ছে তারা। এছাড়াও আজ জিততে পারলে, ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলবে ফরাসিরা।

গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে ফ্রান্স। এরপর ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে শেষ ষোল। তবে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিসিয়ার কাছে ১-০ তে হেরে বসে লে ব্লুজরা। যদিও সেই ম্যাচে মূল একাদশ খেলাননি কোচ। আর রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। সেখামে কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে লে ব্লুজ।

ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা দলটির ২৩ বছর বয়সী স্ট্রাইকার কিলিয়ান এম্বাপ্পে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ৫ গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ৪ গোল করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ খেলা এম্বাপ্পের গোল মোট ৯টি।

বিপরীতে উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মরক্কোর বিশ্বকাপ অভিষেক হয় ১৯৭০ সালে। এখনো পর্যন্ত ৬ বার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দলটি। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের গন্ডি পেরিয়ে গোটা আফ্রিকাকে গর্বিত করেছিল দেশটি। এবার তারা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব সাফল্য। আরব ও আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দলটি। আজ ফ্রান্সকে হারাতে পারলে প্রথম আরব, আফ্রিকান ও মুসলিম দেশ হিসেবে ফাইনালে পৌঁছে যাবে মরক্কো। আফ্রিকাকে আবারো গর্বিত করার আরেকটি সুযোগ দেশটির সামনে।

বিশ্বকাপে মরক্কোর সাফল্যের পেছনে মূল নায়ক দলটির কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি। গত সেপ্টেম্বরে মরক্কোর দায়িত্ব নেন তিনি। তার অধীনে এখন পর্যন্ত ৮টি ম্যাচ খেলে একটিতেও হারেনি মরক্কো। বিপরীতে একের পর এক বড় দলকে হারিয়ে তারা পেয়েছে ‘জায়ান্ট কিলার’ খেতাব।

এবারের বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য খেলেছে আফ্রিকার দেশটি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেউ কল্পনাও করেননি সেমিফাইনালে খেলবে মরক্কো। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছিল মরক্কো। এরপর বেলজিয়ামকে ২-০ হারিয়ে সবাইকে চমকে দেয় দেশটি। কিন্তু সেটা ছিল চমকের সবে শুরু। কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে এফ গ্রুপ থেকে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে ওঠে দলটি। প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়ে কোয়ার্টার নিশ্চিত করে তারা। কোয়ার্টারে তারা হারিয়েছে রোনাল্ডো-ফার্নান্দেজদের পর্তুগালকে।

বিশ্বকাপের পাঁচ ম্যাচে এখনো পর্যন্ত প্রতিপক্ষ একবারও গোল করতে পারেনি তাদের বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল মরক্কো; সেই ম্যাচে কানাডার পক্ষে যে গোলটি হয়েছে সেটিও ছিল আত্মঘাতী গোল।

মরক্কোর সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা আশরাফ হাকিমি, হাকিম জিয়েখ ও দলটির গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। ইউরোপিয়ান বিভিন্ন লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আজ পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাতে প্রস্তুত দলের খেলোয়াড়েরা।

গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে মরক্কো পাচ্ছে না স্ট্রাইকার ওয়ালিদ চেদরিয়াকে। পর্তুগালের বিপক্ষে লাল কার্ড পাওয়ায় আজ নামতে পারবেন না তিনি। এছাড়া ইনজুরিতে পড়েছেন দলটির অধিনায়ক রোমেইন সেইস, হাকিম জিয়েখ ও নায়েফ অ্যাগুয়ের্ড। এই তিন খেলোয়াড় পুরোপুরিভাবে ফিট না থাকলে সমস্যায় পড়বে দলটি।

তবে ফ্রান্স দলে ইনজুরি বা সাসপেনশনজনিত কোনো সমস্যা নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লুকাস হার্নান্দেজ এসিএল ইনজুরিতে পড়লে বিশ্বকাপ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যান তিনি । তার জায়গার তারই ভাই থিও হার্নান্দেজ চমৎকার খেলেছেন বাকি ম্যাচগুলোতে।

পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকা এবং তারকা খেলোয়াড়ের অভাব; এই দুই জায়গায় পিছিয়ে আছে তো বটেই, মাঠের অভিজ্ঞতাতেও পিছিয়ে থাকবে মরক্কো। বিশ্বকাপে সপ্তমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলছে ফ্রান্স। বিপরীতে এটিই মরক্কোর প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। ফলে আজ জিতলেই অনবদ্য ইতিহাস রচনা করতে পারবে অ্যাটলাস লায়নস। তবে সব ছাপিয়ে উপভোগ্য এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় গোটাবিশ্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *