আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস এবং মানবাধিকার দিবসের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯টি দেশে দুর্নীতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ৪০টিরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া আরও ৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দুই দেশের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) মার্কিন ট্রেজারি অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।
ওএফএসি জানায়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিম বলকান, বেলারুশ, লাইবেরিয়া, গুয়াতেমালা, রাশিয়ান ফেডারেশন, মিয়ানমার ও ইরানের।
ওয়াশিংটন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং এর ১৫ সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রুশ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ‘জাল গণভোট’ তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ এনেছে দেশটি।
ইউক্রেনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুই রুশ নাগরিক এবং রুশ প্রশাসনকে সহায়তায় আরও চারজনকে অভিযুক্ত করেছে।
এ ছাড়া চীনের তিব্বত অঞ্চলে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত দুই চীনা কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন ট্রেজারি।
বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের জন্য ইরানি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বর্ডার গার্ড জেনারেল ব্যুরো, গিনির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলফা কন্ডে এবং এল সালভাদর, ফিলিপাইন, মালি ও গুয়াতেমালার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।
ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাস এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানের মিশন তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে, আরেক ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাজ্য রাশিয়া ও ইরানের কর্মকর্তাসহ বিশ্বব্যাপী ৩০ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। তাদেরকে নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং রাস্তায় প্রতিবাদকারীদের সহিংস দমনের জন্য দায়ী বলে মনে করে দেশটি।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।
ব্রিটিশ সরকার জানায়, বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস এবং বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তারা বন্দী নির্যাতন এবং সৈন্যদের সন্নিবেশিত করে বেসামরিক নাগরিকদের ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো মৌলিক অধিকারের জঘন্য লঙ্ঘনের পিছনে যারা জড়িত রয়েছে, তাদেরকে আরও উন্মোচন করেছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন রাশিয়ার ৯০তম ট্যাঙ্ক ডিভিশনের কমান্ডার কর্নেল রামিল রখমাতুলোভিচ ইবাতুলিন। তাকে এ বছরের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে যুদ্ধে তার ভূমিকার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
ব্রিটেন ইরানের বিচার ও কারাগার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ১০ জন ইরানি কর্মকর্তাকেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তেহরানের এভিন কারাগারের সাবেক পরিচালক আলী চেহারমাহালি এবং গোলামরেজা জিয়ায়িকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিকারাগুয়া, পাকিস্তান ও উগান্ডার কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানের দুই স্থানীয় কর্মকর্তা, মালিতে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের তিনটি সামরিক সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংগঠিত যৌন সহিংসতার কথাও তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্য।
এ ছাড়া কসোভো, মলদোভা এবং সার্বিয়ার নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলেও এ বছর তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নেই।