জনগণের যখন জোয়ার উঠে তখন কেউ ঠেকাতে পারে না : নজরুল ইসলাম

Slider রাজনীতি


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকার মনে করেছিল বাস বন্ধ করে দিলে জনগণের স্রোত ঠেকিয়ে দেয়া যাবে, কিন্তু তা হয়নি। জনগণের যখন জোয়ার উঠে তখন কেউ ঠেকাতে পারে না।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহী নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে (মাদরাসা মাঠ) বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নেতাকর্মীর বিপুল উপস্থিতির কারণে সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জনগণের যখন জোয়ার উঠে তখন কেউ ঠেকাতে পারে না। সরকার মনে করেছে বাস বন্ধ করে দিলে জনগণের স্রোত ঠেকিয়ে দিবে। কিন্তু মানুষ পাঁয়ে হেঁটে সমাবেশে এসেছে। যারা আসার সবাই এসেছে। এরাই বিএনপির আসল নেতা, আসল কর্মী।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার বিনা ভোটের সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় তারা দিনের ভোট রাতে করেছে। এখন সারা পৃথিবীর মানুষ সেটা জানে। ক’দিন আগে জাপানের রাষ্ট্রদূতও সেটা বলেছেন। কিন্তু সরকারের কোনো লজ্জা নেই। তবে তাদের লজ্জা থাকুক আর না থাকুক আমাদের জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার দরকার। সেজন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে, এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’

সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আজ জনস্রোতে রাজশাহী শহরের সকল অলি-গলি স্তব্দ হয়ে গেছে। একটাই আওয়াজ উঠেছে- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। কারণ এই সরকার দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। তাই এই সমাবেশ থেকে মানুষ জানিয়ে দিচ্ছে তারা সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। তারা এই সরকারকে লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা হামলা করায় মার্চ মাসে পুরো বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ডিসেম্বরে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম আজ ৫০ বছর পর সেই গণতন্ত্রের জন্য আমাদের আবার যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল বিমানবন্দর থেকে রাজশাহী শহরে যখন এসেছি তখন পুলিশ আমাদের গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কোথায় যাচ্ছি? আমি বলেছি, আওয়ামী লীগ যে ভোট রাতে চুরি করেছে, আমরা তা ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম, এই বয়সে এখনো আবার যুদ্ধ করবো গণতন্ত্রের জন্য।’

এ সময় পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আওয়ামী লীগ করেন তাহলে সেটা করতে পারেন। আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সেটা করলে পোশাক খুলে আওয়ামী লীগ করেন। তারপরে রাস্তায় আসুন। দেখি কারা জয়লাভ করে। কিন্তু আমার টাকায় আমার অস্ত্র দিয়ে হায়ানার মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন না।’

এর আগে সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে রাজশাহী নগরী ও জেলার বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশের মাঠে আসে। মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আশেপাশের রাস্তায় অবস্থান নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল থেকে সরকার বিরোধী বিক্ষুব্ধ স্লোগান দেন। তাদের হাতে দেখা যায় প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ধানের শীষ। অনেকে রঙিন গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করে জনসভাস্থলে পৌঁছেছেন।

সকাল থেকে গণসমাবেশে আসা নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) পক্ষ থেকে গান পরিবেশন করা হয়।

মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, অ্যাডভোকেট কবির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলু, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, সহ-সাংগঠনিক সৈয়দ শাহিন শওকত, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষকদল সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল পরিবহন মালিক সমিতি ও থ্রি-হুইলার মালিক সমিতি। পরিবহন ধর্মঘট ও নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা এড়াতে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মী এসে জড়ো হয় রাজশাহীতে। সমাবেশস্থলের পাশেই ঈদগাহ মাঠে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা সামিয়ানা টানিয়ে অবস্থান করেন।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সীমাহীন লোডশেডিং, দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সাংগাঠনিক বিভাগে ধারাবাহিক গণসমাবেশ করছে বিএনপি।

গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশ হয়। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির গণসমাবেশে শেষ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *