আগামী ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে সাধারণের মনেও। ওইদিন কী হবে ঢাকায়, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু ঘটবে কিনা, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কি মুখোমুখি হবে, নাকি স্বাভাবিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই শেষ হবে? এমন সব প্রশ্ন ঘুরছে মানুষের মুখে মুখে। বিএনপির ঢাকার জনসভা ঘিরে এই আলোচনা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বর থেকেই রাজধানীর প্রতিটি ইউনিট ও ওয়ার্ডে সক্রিয় থাকবেন তারা। ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের আয়োজনও করা হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশ সোহরাওয়ার্দীতে রাখার পক্ষপাতী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য তারা ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি তাদের। কিন্তু বিএনপি এখনো জোরালোভাবে দাবি করছে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে তারা। এমন বাস্তবতায় সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শঙ্কাও বাড়ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রশাসনের পাশাপাশি তারা পুরো রাজধানী পাহারায় থাকবেন।
কেউ মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে কোনো ছাড় দেবেন না। এমন প্রত্যয় দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও।
জানা গেছে, আগামী ৫ ডিসেম্বর কর্মিসভা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সেখান থেকেই ১০ ডিসেম্বর আগে-পরে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ জানান, আগামী ৯ ডিসেম্বর বিকাল আড়াইটায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটসংলগ্ন এলাকায় সমাবেশ হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগরের নেতাদের নিয়ে বসবেন নগরের শীর্ষ দুই নেতা।
এ ছাড়া ১০ ডিসেম্বর সাভারে সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার যৌথসভা করেছে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, সাবেক মহিলা সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবণ্য, সদস্য সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম সমর প্রমুখ।
ঢাকা জেলার সভার বিষয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার আয়োজনে সাভার রেডিও কলোনি মাঠে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় সব নেতার থাকার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার সাভারে দলের দৃশ্যমান কর্মসূচি থাকলেও জেলার সব প্রবেশদ্বারে কর্মসূচি থাকবে। কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, পোস্তগোলা, ডেমরাসহ রাজধানীর প্রবেশদ্বারে কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের।
ঢাকা অন্যতম প্রবেশদ্বার উত্তরা ও আবদুল্লাহপুর। ওই এলাকার সংসদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিব হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে নিজ এলাকা নিরাপদে রাখার দায়িত্ব তো আছেই। সে অনুযায়ী ৮ ডিসেম্বর থেকে আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলব। ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে ১০ তারিখ তো আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি থাকবেই। এতটুকু বলতে পারি আমার এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নৈরাজ্য করতে দেব না।’
ঢাকা আরেক প্রবেশ^দ্বার যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৫ আসনে চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক হারুনর রশীদ মুন্না বলেন, ‘বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে তা হলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু জনগণের জানমালের ক্ষতি করলে দলটির একটি নেতাকর্মীকেও যাত্রাবাড়ী দিয়ে প্রবেশ করতে দেব না।’
১০ ডিসেম্বর নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি কয়েকটা লোক এক হওয়া মানেই তো গণ্ডগোল বাধার পরিকল্পনা। সুতরাং বিএনপির সমাবেশ নিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের নয়, জনগণেরই শঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সমাবেশের নামে জনগণের ক্ষতি করার প্রবণতা দলটির জন্মগত অভ্যাস। সে জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা জনগণের নিরাপত্তার কথা ভেবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।