ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বিএনপির শেষ বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে দলটির অনেক নেতাকর্মী শহরে হাজির হলেও সমাবেশের ভেন্যু মাদরাসা ময়দানে প্রবেশের সুযোগ পায়নি।
রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম সিদ্দিকী বলেছেন, বিএনপি শনিবার বেলা ২টা থেকে সমাবেশের জন্য অনুমতি নিয়েছে এবং সে কারণে তখন থেকেই তারা সেখানে যেতে পারবেন।
‘এটা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ। এটি রান্নার জায়গা নয়। তারা (বিএনপি) যেভাবে অনুমতি নিয়েছে তার ভিত্তিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। তার আগে ওখানে কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে, বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।
যদিও বিএনপির নেতাকর্মীরা এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা এখন পাশের ঈদগাঁহ মাঠে অবস্থান নিয়েছেন।
মূলত, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকেই রাজশাহীতে সমবেত হতে শুরু করেছেন। অনেকেই অবশ্য অভিযোগ করেছেন যে আসার পথে তাদের নানা জায়গায় বাধা দেয়া হয়েছে।
‘অনেক কষ্ট করে বগুড়া থেকে এসেছি। বাস-ট্রাক কিছু নেই। এরপরেও এসেছি খালেদা জিয়ার জন্য,’ জানান বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে আসা আব্দুল মান্নান।
জায়েদা কামাল নামে এক নারী বলছিলেন যে তারা যেকোনো মূল্যে বর্তমান সরকারের পতন চান এবং সে কারণেই তারা এই সমাবেশে আসার তাগিদ অনুভব করেছেন।
সমাবেশের ভেন্যু মাদরাসা ময়দানে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ায় কয়েক হাজার নেতা-কর্মী প্রায় অর্ধশত তাঁবু গেড়ে ও সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে পাশের ঈদগাহ মাঠেই অবস্থান শুরু করেছেন গত রাত থেকেই।
সেখানে থাকা ও খাওয়ার আয়োজনের পাশাপাশি মিছিল-শ্লোগানে রীতিমতো উৎসবের আবহ দেখা গেছে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপির দেশজুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে যে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে তার অংশ হিসেবে রাজশাহীতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
বিএনপি কর্মী ও সমর্থকদের দাবি রাজশাহী অঞ্চলের বরাবরই তাদের সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান আছে এবং এর প্রতিফলন দেখার আশা করছেন তারা শনিবারের সমাবেশে।
তবে এর মধ্যেই বিভিন্ন দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে মালিক-শ্রমিকরা।
এর আগে খুলনা, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও এ ধরনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল।
বিএনপির অভিযোগ ছিল তাদের সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতেই এভাবে ধর্মঘট দেয়া হচ্ছে। যদিও মালিক-শ্রমিকরা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা অবশ্য বলছেন, ধর্মঘট ও পুলিশী বাধা অতিক্রম করেই তারা সমাবেশ সফল করবেন এবং এর প্রভাব পড়বে আগামী ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার সমাবেশেও।
দলটির রাজশাহী অঞ্চলের একজন নেতা গোলাম মোস্তফা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার ধারণা রাজশাহীর সমাবেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ যোগ দেবে আর এই সমাবেশের প্রভাব পড়বে ঢাকার সমাবেশের ওপরও।
তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো রাজশাহীতে দেখা গেছে কড়া পুলিশী পাহারা।
এমনকি সমাবেশের ভেন্যুতেও কাউকে বিকেল পর্যন্ত প্রবেশ করতে দিতে দেখা যায়নি। শহরে প্রবেশের পয়েন্টগুলোতে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এর মধ্যেই নানা জায়গায় বিএনপির সমালোচনা করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট।
সূত্র : বিবিসি