কারাগারের খাবারেই অসুস্থ হচ্ছেন বিএনপি নেতারা

Slider টপ নিউজ

25546_1


 

 

 

বিএনপির কারাবন্দী নেতাদের অসুস্থ হওয়ার পেছনে জেলখানার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। কারাগারের দেয়া খাবার খেয়েই বিএনপির নেতাকর্মীরা অসুস্থ হচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। ফলে বাধ্য হয়ে কারাগারের দেয়া খাবার বন্ধ রেখে নিজেদের টাকায় বেশি দামে খাবার খেতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। নেতাদের মতে, কারা কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত খাবার অত্যন্ত নি¤œমানের। সেই খাবার খেয়েই তারা অসুস্থ হওয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকের শারীরিক সমস্যা নতুনভাবে দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ মাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওজন কমেছে প্রায় পনের কেজি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথা নাকি প্রায় সময় ঘুরায়! জেলে যাওয়ার পরই শরীরে রোগ দানা বাঁধে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ৯ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হন। সর্বশেষ গত শুক্রবার বাসায় ফিরেছেন তিনি। গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নান গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে দলের সিনিয়র নেতাদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেও নেতাদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে তাদের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। ৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা দলের কারাবন্দী সিনিয়র নেতাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। গত ৩ মে দলের কারাবন্দী সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যুর পরই এমন দাবি করে বিএনপি।
গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস কাব চত্বরে গ্রেফতার হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই থেকে পাঁচ মাস ধরে জেলে তিনি। গত মঙ্গলবারও তাকে আদালতে হাজির করা হয়। একই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তা নামঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এর আগে গত ৫ মে অসুস্থ হয়ে পড়লে কাশিমপুর কারাগার থেকে মির্জা ফখরুলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে তোলা হয়। পরে ফের কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
মির্জা ফখরুলের পরিবার ও ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, তার শরীরের অবস্থা খুব বেশি ভালো না। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি। উচ্চরক্তচাপ, আইবিএস, মেরুদণ্ড, দাঁতের সমস্যাসহ আরো বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত তিনি।
এ অবস্থায় গত শুক্রবার দুপুরে মির্জা ফখরুলের সাথে দেখা করেছেন তার স্ত্রী রাহাত আরা ছাড়াও দুই বোন, মেয়ে ও জামাতাসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়।
প্রায় দেড় বছর ধরে জেলে বন্দী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০১২ সালের ১২ মার্চ রাতে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার হন তিনি। শারীরিক দুর্বলতার কারণে গত ১০ মে বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে যান। বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হলেও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন তিনি।
ড. মোশাররফের ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বাবার শরীরের ওজন কমেছে পাঁচ কেজির মতো। কারাগারের খাবারের কারণে এটা হতে পারে। বর্তমানে কারাগারের দেয়া খাবার বন্ধ রেখে বেশি দামে নিজের টাকায় খাবার খাচ্ছেন তিনি। পরিবার থেকে প্রতি শনিবার খাবার নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে তার বাবা হার্ট, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সম্প্রতি তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ায় শরীরে ব্যথা আছে বলে জানান মারুফ হোসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। প্রায় সময় তার মাথা ঘুরায়। তিনিও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দীর্ঘ দিন জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় কারাগারের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ও কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। ৯ মে বেশি অসুস্থ হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শুক্রবার তিনি বাসায় ফিরেছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে বলেন, কারাগারের খাবারের অবস্থা খুবই নি¤œমানের, যা খাওয়ার পরই পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক সময় বমি বমি লাগে। মোটা চাল দিয়ে ভাত আর অপরিষ্কার আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে কয়েদিদের খাবার দেয়া হয়, যা খাওয়ার অনুপযোগী। ফলে বাধ্য হয়ে কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া খাবার বন্ধ রেখেছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, কোনো মানুষকে সুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়ার পরই তিনি অসুস্থ হন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। মূলত কারাগারের খাবার ও সেখানকার পরিবেশকে দায়ী করেন তিনি।
কারাগারের অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তির অসুস্থ হওয়া প্রসঙ্গে এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, একজন সুস্থ মানুষের জন্য কারাগারে যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তা নেই। একটি ছোট ঘরে ধারণক্ষমতার বেশি লোক রাখা হয়। যে খাবার দেয়া হয় তাও নি¤œমানের ও অপরিষ্কার। যদিও ভিআইপি বন্দীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।

তিনি বলেন, একেক বন্দী একেক ধরনের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু কারাগারে সবাইকে একই ধরনের খাবার দেয়া হয়। চাহিদামতো খাবার দেয়া হয় না। চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়। এমনকি কারাগারে অভিজ্ঞ কোনো চিকিৎসকও নেই। ফলে বন্দীরা রোগাক্রান্ত হন এবং সুচিকিৎসা পান না।
ডা: রফিকুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্রেইনের একপাশে চল্লিশ ভাগ আরেক পাশে ষাট ভাগ ব্লক। তিনি এনজিও প্লাস্টি করা। প্রায় সময় তার মাথা ঘুরায় ও চক্কর দেয়। অন্য দিকে গাজীপুর সিটি মেয়র আব্দুল মান্নানও অসুস্থ। তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
এসব রাজনীতিবিদকে হয়রানি না করে সুচিকিৎসা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে প্রতিদিন রুটিনমাফিক চিকিৎসক পাঠিয়ে বন্দীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
কারাগারের সরবরাহ করা খাবারের মান সম্পর্কে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

 

 

– See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/25546#sthash.BkljL7pp.dpuf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *