বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে: তিনটি শূন্য নিশ্চিত করতে পারলেই বিশ্ব এগুবে। শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব আর শূন্য মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ। সারা বিশ্ব থেকে আসা সামাজিক ব্যবসার বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস।
আর এ লক্ষ্যে অনেকটা শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বকে একটি নতুন রূপ দিতে হবে। যেটা আমাদের প্রয়োজন তা জেনে তবে নিশ্চিত করার পথে এগিয়ে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সকাল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া সামাজিক ব্যবসা দিবসের মূল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দিবসটি উদযাপনের আয়োজনে উপস্থিত হয়েছেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা। অংশ নিয়েছেন সামাজিক ব্যবসায় অংশ নেওয়া সাধারণ নারী-পুরুষ। যারা এ ব্যবসা দিয়ে তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছেন, তারা তাদের নিজেদের এগিয়ে চলার গল্পও শেয়ার করছেন।
বক্তৃতায় নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ তরুণদে মরিয়া হয়ে চাকরি না খুঁজে, উদ্যোগী ও উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করেছেন। তারা যেকোনো সামাজিক ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে এলে তার অংশীদার হবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, কেন তরুণরা চাকরির জন্য হা-পিত্যেশ করবে। তাদের মাঝে সে শক্তিই রয়েছে যে, অন্যের চাকরি না করে নিজেই অন্যকে চাকরি দেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
আমাদের সঙ্গে যারা রয়েছেন, যারা আসবেন, তারা আমাদের ঋণগ্রহীতা নন, তারা আমাদের অংশীদার।
তিনি বলেন, আমাদের শিশুদের জন্য ভবিষ্যতের জীবিকার নিশ্চয়তা তৈরি করতে হবে। কীভাবে কোন পথে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসবে তা নিয়ে আমরা কথা বলছি। আমরা টেকসই সমাজের কথা বলছি।
ইউনূস বলেন, আমরা আমাদের চিন্তাকে প্রয়োজনে নতুন করে সাজাবো। কেন কেউ কাজ না করে বসে থাকবে।
বেকারত্ব শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এ সমস্যা ইউরোপেও রয়েছে। যেখানেই যে কাজ করতে চাইবে, তার জন্য সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আগ্রহ এখানে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেউ কারও সমস্যা সমাধান করে দেবে না, নিজে থেকেই এগিয়ে আসতে হবে, অন্যরা সহযোগিতা করবে।
ইউনূস বলেন, ভালো চাকরি খোঁজার পরামর্শ দেওয়া ভুল, বরং উদ্যোক্তা হতে হবে।
এদিন সকাল ৯টার দিকে অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে শিশুরা।
এরপর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, ঢাকা সফরকারী মালয়েশিয়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা শরিফা হাফসা প্রমুখ।
দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ভিডিও বার্তা পাঠান। এটি অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়।
এবার সামাজিক ব্যবসা দিবসের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে, ‘আমরা চাকুরি প্রার্থী নই, আমরা চাকরিদাতা, যুব বেকারত্বকে উদ্যোক্তায় রূপান্তর (উই আর নট জব সিকারস, উই আর জব গিভারস- টার্নিং আনএমপ্লয়মেন্ট টু এন্টারপ্রেনারশিপ)’।
দিনব্যাপী সেমিনার ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে এতে থাকবে আলোচনা সভা। মোট ৩০ দেশের প্রায় ২শ’ ৫০ জন প্রতিনিধি এ অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন বলে ইউনূস সেন্টার থেকে আগেই জানানো হয়েছে।
এছাড়া থাকছে নবীন উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের মেলাও।