আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালিতে পাচারকারীদের নৌকায় ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সরকারের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ আনেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, মানব পাচারের ‘ফাঁদে পড়ে’ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ সাগরে ভাসছে। এদের উদ্ধারে দেশের কতজন মন্ত্রী ও সচিব ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে গেছেন? কয়টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে? এটা লজ্জা ও ক্ষোভের। বহু দেশ সাগরে বিপদে পড়া মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার ঘোষণা দিলেও সরকারের মন্ত্রীদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত ‘মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বিকল্পধারার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, সাংবাদিক কাজী সিরাজ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বক্তব্য দেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, সমুদ্রবক্ষে যেখানে বাংলাদেশিরা ভেসে আছেন, সেখানে তারা (সরকার) নিশ্চুপ। এ লজ্জা সব অগ্রগতিকে ম্লান করে দেয়। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সব দেশে গিয়ে বিষয়গুলোর সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দেশে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে থাকলে এর পরিণতি ক্ষমতাসীনদের জন্য ‘শুভ হবে না’ বলেও হুঁশিয়ার করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, যেভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে তিন সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়ে গেল। এ পদ্ধতিতে যদি সরকার নির্বাচন চালিয়ে যায়, চালিয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পরিণতিতে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। বিকল্পধারা-প্রধান বলেন, অতীতের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, কেউ টিকে থাকতে পারেনি। রুমানিয়ার নিকোলাই চসেস্কুর মতো মহাক্ষমতাধরও টিকে থাকতে পারেননি। সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন হাসতে হাসতে বলেছেন ‘দারুণ নির্বাচন হয়েছে’। এই পদে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যদি এভাবে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন, তাহলে আমরা যাব কোথায়?”
বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংবিধান সংশোধন বিল পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন বিকল্পধারা সভাপতি। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ‘মুক্ত মন নিয়ে আসবেন এবং আমরা আশা করি, তিস্তা চুক্তির সমাধান দেবেন। পানিবণ্টন সমস্যার বিষয়টি মোদির ঢাকা সফরে আলোচনার ‘এক নম্বর এজেন্ডা’য় নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা যদি প্রতিবেশেী দেশের সঙ্গে খোঁচাখুঁচি করি, তাহলে কীভাবে হবে? প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে আমাদের নীতি হতে হবে- ‘নিতে হবে, দিতে হবে’।” মওলানা ভাসানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিএনপির আজকের অবস্থান নিয়ে ‘আক্ষেপ’ প্রকাশ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বিএনপির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলেন, “প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মন থেকে মওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু বিএনপি এখন ‘প্রকৃত অর্থে’ শ্রদ্ধা জানানোর মতো কর্মসূচি নেয় না। পাঠ্যপুস্তকেও ভাসানীর জীবনী স্থান পায় না। পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো তাকে চিনতেই পারবে না। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের।”