আজ ২২ অক্টোবর বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫৪ সালের এই দিনে কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। তার বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন শিক্ষক ও সমাজসেবক। মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন কবি। জীবনানন্দ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাদের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের গাওপাড়া প্রামে।
অধ্যাপনায় জীবনানন্দের কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ১৯২৮-এ সরস্বতী পূজা নিয়ে গোলযোগ শুরু হলে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাকেও ছাঁটাই করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জীবনের শেষভাগে কিছুদিনের জন্য কলকাতার একটি দৈনিক পত্রিকা ‘স্বরাজ’-এর সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনায় নিযুক্ত ছিলেন।
একটি চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। স্ত্রী লাবণ্য দাশ স্কুলে শিক্ষকতা করে জীবিকার অভাব কিছুটা পুষিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে অকাল মৃত্যুর সময় তিনি হাওড়া গার্লস কলেজ কর্মরত ছিলেন। দুই দফা দীর্ঘ বেকার জীবনে তিনি ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন এবং প্রধানত গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ের চেষ্টাও করেছিলেন বছরখানেক। দারিদ্র্য এবং অনটন ছিল তার কর্মজীবনের ছায়াসঙ্গী।
জীবনানন্দের কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঝরাপালক (১৯২৭), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), রূপসী বাংলা (১৯৫৭) ও বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)। তার উপন্যাসের (অপ্রকাশিত) মধ্যে রয়েছে- পূর্ণিমা (১৯৩১), করুবাসনা (১৯৩৩), নিরুপম যাত্রা (১৯৩৩), জীবনপ্রণালী (১৯৩৩), জলপাইহাটি (১৯৪৮), বাসমতীর উপাখ্যান (১৯৪৮)। কবিতার কথা (১৯৫৬) তার একমাত্র প্রবন্ধগ্রন্থ।
নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন ১৯৫২ সালে পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণ ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থটি বাংলা ১৩৫৯-এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বিবেচনায় পুরস্কৃত করা হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।