মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগে ২০১৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বিভাগের ‘এলিট ফোর্স’ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) আর্থিক ও প্রশক্ষিণসহ যাবতীয় সহায়তা দেওয়া বন্ধ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে নেড বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ পাওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকেই আমরা র্যাবকে যাবতীয় সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছি। গত চার বছর ধরে র্যাবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই।’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণমূলক কাজে সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগে র্যাব ও এই বাহিনীর ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন সরকার। সেই থেকেই নিষেধাজ্ঞা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, র্যাবকে বাহিনীকে গঠন ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং র্যাব যা যা করেছে এবং করছে, সেসব সেই প্রশিক্ষণের প্রভাবেই। বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগের উত্তর দিছেন নেড প্রাইস।
নেড প্রাইস বলেন, ‘বাংলাদেশ- দক্ষিণ এশিয়া অথবা বিশ্বের যে কোনো দেশ বা ভৌগলিক অঞ্চলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। কোনো রাষ্ট্র বা অঞ্চলে যদি মানবাধিকর লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটি প্রকাশ্যে আনা এবং ওই দেশ বা অঞ্চলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্রের আশা, র্যাব যাবতীয় মানবাধিকার পরিপন্থী কার্যক্রম থেকে সরে আসবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইনের আওতায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও এই বাহিনীর ছয় কর্মকর্তার ওপর আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। আমাদের এই নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য শাস্তি নয়, বরং আমরা চাই বাংলাদেশের সরকার র্যাবকে আরও জবাবদিহিতার আওতায় আনুক এবং র্যাবও মানবাধিকার লঙ্ঘণ সম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসুক।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন রক্ষায় বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান করা অব্যাহত থাকবে বলেও নিশ্চিত করেছেন নেড প্রাইস।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের রাজনীতিতে বাধা দেওয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মন্তব্য রয়েছে কিনা।
জবাবে নেড প্রাইস বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে যে বৈশ্বিক স্বীকৃতি বা মানদণ্ড রয়েছে, তা যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয়— কেবল আমরা এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারব। তবে আমরা মনে করি শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবি দাওয়া জানানোর অধিকার বিশ্বের প্রতিটি দেশের নাগরিকেরই রয়েছে।’