ফাহিমা নূর, শ্রীপুর থেকে ফিরে: তিন দিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সীমানা। দিলীপ চন্দ্র সাহা ভিটেমাটি ও দোকানপাট ছেড়ে কোথায় যাবেন, সেজন্য পাগলের মত দৌড়াচ্ছেন। জমির মূল্য নিয়ে এখন তার কোন মাথা ব্যথা নেই। যাই পাই তাতেই চলবে। তার মনে একটিই প্রশ্ন, আমি এখন কোথায় যাব!!
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওয়ালা গ্রামের স্বর্গীয় বলাই চন্দ্র সাহার ছেলে দিলিপ চন্দ্র সাহা। ৮ শতক জমি কিনে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করছেন। বাসার সামনে দোকান। কর্মস্থল আর আবাসস্থল একটিই হওয়ায় বেশ আনন্দে কাটছিল দিলিপের সংসার। সম্প্রতি একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দিলিপের ঠিকানার তিন দিকে জমি কিনে সীমানাপ্রাচীর নির্মান করেন। বাসা কাম দোকানের তিন দিক বন্ধ ও একদিক খোলা থাকা অবস্থায় চলছে দিলিপের জীবন।
দিলিপ তার লিখিত অভিযোগ ও ভিডিওতে বলা অভিযোগে জানান, তিন দিকে সীমানাপ্রচীর দেয়ার পর তার জমি কিনতে চায় তাকে ঘেরাও করা শিল্পপতিষ্ঠান। প্রথমে জমির মূল্য দুই কোটি ২০ লাখ টাকা ঠিক করে যাবতীয় কাগজপত্র নেয় ক্রেতাপক্ষ। পরবর্তি সময় নানাবিধ কারণ দেখিয়ে দালালদের চাপে দাম কমে যায় দিন দিন। এক সময় চলে আসে হুমকি। উচ্ছেদের হুমকিতে পড়ে দিলিপ দিশেহারা হয়ে যায়। এক পর্যায়ে গাজীপুর জেলা প্রেসক্লবকে ঘটনা জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন দিলিপ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দিলিপের বাসা ও দোকান তিন দিক থেকে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু হলে এখানে বসবাস ও ব্যবসা করা অসম্ভব। নানা কথা ভেবে দিলিপ চন্দ্র সাহা জমিটি বিক্রি করে দেন দুই কোটি ২০ লাখ টাকায়। অভিযোগ করার পর উচ্ছেদের পরিবর্তে জমির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা। স্থানীয় মকবুল মেম্বার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে মিডিয়া করে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা সর্বশেষ মূল্য ঠিক করেন বলে জানান দিলিপ। বর্তমানে জমিটি রেজিষ্ট্রেশনের অপেক্ষায় আছে। এই অবস্থায় দিলিপ চন্দ্র সাহা জানান, যাদের কথায় জমি বিক্রি করেছেন তারা এলাকার মাথা। তাদের কথার বাইরে যাওয়া যাবে না।
জমি বিক্রির মধ্যস্থতাকারী মকবুল মেম্বার বলেছেন, তিনি মধ্যস্থতা করে দিলিপের জমির মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকা সর্বশেষ মূল্য ঠিক করেছেন। তার সাথে কারা কারা আছেন তা তিনি বলেননি।
এ বিষয়ে গাজীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল হক মাতবর বলেছেন, আমি কোন হুমকি দেই নি। আমার কাছে দিলিপ নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেনি। দিলিপকে উচ্ছেদ করা হবে না। জমি কেনা হবে।
এদিকে আরেকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গ্যাস লাইন স্থাপনের জন্য রাস্তা কেটে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেছেন, রাস্তা কাটার লিখিত অনুমতি তিনি দিয়েছেন তবে মিডিয়ায় প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন চেয়ারম্যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে জনৈক মোহসীন নামে এক ব্যক্তি জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বাড়ি করার সময় মোহসীন ১৪ লাখ টাকা চাাঁদা দিয়েছেন। মার্কেটের কাজ শুরুর সময়ও একই অংকের দাবী আসে। এতে রাজি না হওয়ায় মোহসীনের স্থাপনা ভাঙচূর হয়। এ বিষয় মোহসীন শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এই অভিযোগের আসামী গাজীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল হক মাতবরের ছেলে চাঁন মিয়া।
মোহসীর জানায়, চাঁন মিয়া তাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, তার মতো আরো একাধিক ভুক্তভোগী আছে। তাই তিনি বিষয়টি আইনের আওতায় দিয়েছেন। পুলিশ র্যাব সহ সরকারের যে কোন সংস্থাকে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি তিনি নিজের জান মালের নিরাপত্তাও দাবী করেছেন।
অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল হক মাতবর ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। দল তাকে বহিঃস্কারও করে। বহি:স্কারের পরও তিনি এমপির নাম ভাঙিয়ে চলেন। অংশ গ্রহন করেন আওয়ামীলীগের কর্মসূচিতেও। দলের সাথে বেইমানী করার বিষয়ে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ উচ্চ পর্যায়ের কঠোর হুসিয়ারী থাকলেও কাজ হচ্ছে না শ্রীপুরে।
এ সকল বিষয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দল সবই পর্যবেক্ষন করছে। সময়মত জবাব দেয়া হবে।
চলবে—-