বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকার অনির্বাচিত সরকার। এদেশের মানুষ কিন্তু তাদের মেনে নেয়নি। বাংলাদেশকে তারা শ্মশান করে দিয়েছে। এই স্বৈরাচার সরকারকে হঠিয়ে আমরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই। জনগণের বাক স্বাধীনতাসহ আমাদের সব অধিকার ফিরে পেতে চাই। তাই এ লড়াই অনেক বড় লড়াই, শক্ত লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। আমরা হয় জিতবো, না হয় মরে যাব। তাই আমরা মাথা উচু করে দাঁড়াতে চাই।’
তিনি বুধবার (১২ আক্টোবর) বিকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পুলিশের গুলিতে পাঁচ নেতাকর্মী নিহত ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির আয়োজনে বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এদিকে জনগণ না খেয়ে মরছে। প্রতিটা তরকারির দাম তিন থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়িয়েছে। শুনছি, বিদ্যুতের দাম আবার বাড়াবে। এরা লুটপাট করে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি বানায়। আর জনগণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। দুমুঠো খাবার পায় না মানুষ। মানুষের নিরাপত্তা নেই, দিনদুপুরে ডাকাতি, ছিনতাই হয়।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির এই সমাবেশ আর সমাবেশ নেই, তা এখন মহাসমাবেশে পরিণত হয়েছে। আজকে আমরা এমন একটা জায়গা থেকে কথা বলছি যার অদূরে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র। সেখান থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আমি চট্টগ্রামের মানুষকে বলব, এই সমাবেশকে আপনারা সফল করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, আজ জাতিসঙ্ঘ পরিষ্কারভাবে বলেছে, এখানে গুম হয়। ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার নাই। এখানে হত্যা হয়, গুম হয়। আমাদের সব নেতার ওপর মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের আসতে পদে পদে বাধা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে দলের এ নেতা বলেন, আজ জনসভায় আসার আগে আপনাদের গাড়ি আটকে দিয়েছে। কিন্তু আপনারা এখানে এসেছেন সব বাধা পেরিয়ে। ঠিক একইভাবে সব বাধা ডিঙিয়ে আমরা শেখ হাসিনাকে গদি থেকে সরিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। নিরপেক্ষ সরকার, তত্ত্বাধায়ক সরকার ছাড়া আমরা কোন নির্বাচন মানি না। মানব না।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আজ বন্দী। তিনি ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তারা আমাদের ভয় দেখান আমাদের নেত্রীকে আবার জেলে পাঠাবেন। খালেদা জিয়া জেলকে ভয় পান না। আপনাদের নেতা আসলাম চৌধুরী ছয় বছর ধরে জেলে আছেন। এরা বিচারবিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবকে দলীয়করণ করেছেন। আজ সারাদেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কর্মীরা জনগণের পকেট কেটে বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করছে।’ তারা বলছে, দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে। তেল কম খান, বিদ্যুৎ কম জ্বালান। আর আমরা বলি, তাহলে আপনারা ক্ষমতায় আছেন কেন? আজই পদত্যাগ করেন।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা: শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: খন্দকার মোশারফ হোসেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মো: শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা উত্তর সভাপতি আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি এম এ সালাম, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক গোলাম আকবর খন্দকার, জয়নাল আবেদীন ভিপি, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, যুবদলের সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
এদিকে দুপুরের আগেই বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন থানা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে স্লোগান ও ব্যান্ড দলের বাদ্য বাজিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। নেতাকর্মীদের ভিড়ে একপর্যায়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় চট্টগ্রামের বিশাল পলোগ্রাউন্ড মাঠ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
এদিকে বিএনপির বিভাগীয় এ সমাবেশকে ঘিরে নগরীতে উত্তেজনা বিরাজ করে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী মিরসরাই, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সূত্র : ইউএনবি