পুলিশি হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ অব্যাহত। টানা ১১ দিনের মতো দেশটিতে চলছে এই বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ওপর ইরানি বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সোমবার এক মানবাধিকার সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে ইরানের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে অন্তত চার শিশু নিহত হয়েছে।
তবে ইরানের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৪১। এর মধ্যে ইরানের সরকারি বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আছে। এছাড়া ইরানের কর্তৃপক্ষ সোমবার বলেছে, তারা দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০০ এর বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার পরিচালক হেবা মোরায়েফ বলেছেন, দেশটির কর্তৃপক্ষ কতটা নির্মম নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি তাই ইঙ্গিত করে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সোমবার রাতেও বিক্ষোভকারীরা তেহরান ও আরও অনেক রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছে। তেহরানে বিক্ষোভকারী ‘একনায়কের মৃত্যু’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। তারা দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলী খামেনির তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা শাসনের সমাপ্তি চান।
নরওয়ে ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) গ্রুপ বিক্ষোভের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। তাবরিজ শহরে চলা বিক্ষোভে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে।
আইএইচআর বলেছে, ইরানি বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৭ জন।
এদিকে দেশটিতে এই বিক্ষোভ দমাতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি অঙ্গীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চক্রান্তকারী এই বিক্ষোভ উসকে দিচ্ছে। এছাড়া দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভ হটাতে হুঁশিয়ারি দেন।
হিজাব ঠিকমতো না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাহশা আমিনি। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। পরিবার ও বহু ইরানির দাবি, পুলিশের নির্যাতনে আমিনির মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে আমিনির মৃত্যুর পরেই হাজার হাজার মানুষ ইরানজুড়ে বিক্ষোভে নামে। দেশটির ৮০টির বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ।
গার্ডিয়ান বলছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শতশত বিক্ষোভকারী, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের বাহিনী। তবে এরপরেও ইরানজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
অনেক নারী বিক্ষোভকারী বিক্ষোভের সময় তাদের হিজাব খুলে পুড়িয়ে ফেলেন এবং তাদের চুলও কাটছেন। অনেকে আবার নারী, জীবন, মুক্তি বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।