বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজধানী কিংবা রাজধানীর বাইরে কোনো জায়গায়ই বিএনপির চলমান আন্দোলন চাঙ্গা হতে দেবে না সরকারি দল। বিএনপির আন্দোলন দমনে এক দিকে সরকারিভাবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর থাকবে। অপর দিকে দলীয়ভাবে পাল্টা সভা-সমাবেশ নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের সক্রিয় অবস্থান থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ চলাকালে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘দেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ যুবলীগ যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
এর আগেও বুধবার ঢাকার উত্তরায় অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশ নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। শনিবার বনানীতে অনুষ্ঠিত বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশেও সরকারি দলের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আব্দুর রহমান সম্প্রতি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি আন্দোলন করবে এটা নতুন কোনো কথা নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছে। তাদের আন্দোলন যদি শান্তিপূর্ণ হয় তাহলে সরকার বাধা দেবে না; কিন্তু আন্দোলনের নামে বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে, এটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষা করা ও নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা চালালে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তা কঠোরভাবে দমন করবে। জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগও সাংগঠনিকভাবে মাঠে থাকবে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুক। তবে সেই আন্দোলন শুধু বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সীমাবদ্ধ থাকুক। নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে কেউ বাধা দেবে না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও নমনীয় নীতি দেখাবে। তাদের আন্দোলনের গতিধারা অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়–ক সেটা চায় না আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও পোড়াও। সাধারণ মানুষের ওপর বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে এক দিকে সামাল দেয়া কঠিন হবে। অন্য দিকে দেশের মানুষের জানমালের ক্ষতিরও আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া বিএনপির আন্দোলনকে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন দলটির নেতারা। ফলে বিএনপির চলমান আন্দোলন এ মুহূর্তে কোনোভাবেই সংগঠিত হতে দেবে না আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে দলটির অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই; কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে, সাধারণ মানুষের শান্তি বিনষ্ট করলে তা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেখবে। তিনি আরো বলেন, দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে এগুলো প্রতিহত করা সরকারি দল হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সেই দায়িত্ব পালন করবে। বিএনপি আন্দোলনের নামে অতীতের মতো পেট্রলবোমা মেরে ও অগ্নি সন্ত্রাস করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে তাদের সে সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। তারা যেখানেই আগুন সন্ত্রাস চালাবে, নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনকি সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে তাহলে বাধা দেয়া হবে না; কিন্তু আন্দোলনের নামে অতীতের মতো জ্বালাও- পোড়াও অগ্নি সন্ত্রাস করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করে তাহলে সেই সুযোগ দেয়া হবে না। তিনি বলেন, রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। বিএনপি রাজপথে নেমে সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড করলে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আছে তাদের দমন করবে। আর আমরা দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। রাজপথে থেকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা বলে আসছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। এমনকি তাদের নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে বড় ধরনের কোনো মিছিল বা সভা সমাবেশ করে দেখাতে পারেনি। তবে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেই সুযোগে রাজপথ দখলের নামে বিএনপি অতীতের মতো একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ফায়দা লুটতে পারে- এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়েও সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপির রাজপথ দখলের ঘোষণা দেয়ার পরই রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে বিএনপিকে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তাহলো- আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়েনি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকবে।