বৈশাখের শেষ দিনে আজ শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ দমকা হাওয়া ও ভারী বর্ষণে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়। নিচু এলাকায় পানি জমে। ঘন ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। বিকেল তিনটার দিকে কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যায়। চমকাতে থাকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ। গুরু গুরু গর্জনে ঝরতে শুরু করে বৃষ্টি। প্রথমে প্রায় ঘণ্টাব্যাপি বৃষ্টি নামে। এরপর একটু বিরতি দিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার পর আবারো ভারী বর্ষণ। বজ্রপাতে ঢাকায় মারা গেছে একজন। ঢাকা বেশ কিছু স্থানে ছিড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার। পথচারীদের ভয়ে ভয়ে পথ চলতে হয় কখন বিদ্যুতায়িত তারে লেগে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। বেশ কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ। বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকায় বৃষ্টি হয়ে পরিবেশ একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও খুলনা ও রংপুর বিভাগসহ রাজশাহী, বগুড়া অঞ্চলে চলছে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপ প্রবাহ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশে-পাশের কয়েকটি অঞ্চলে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিরাজ করছে। ঘাম ঝরানোর প্রচণ্ড গরমের এটাই কারণ।
জৈষ্ঠ্যের শুরুতে এ বৃষ্টি পাটসহ কিছু ফসলের জন্য উপকারী হলেও ইরি, বোরো আবাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। পাকা ধানের জন্য এ বৃষ্টিটা অভিশাপের মতো। অসংখ্য কৃষকের সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণে ও শিলা বৃষ্টিতে পাকা ধান ঝরে পড়ে গেছে ক্ষেতে। পানি না শুকানোর আগে এ ধান কৃষক আর তুলতে পারবেন না। ততদিনে ধানে গেরা হয়ে এটা আর ব্যবহারের উপযোগি থাকবে না। অপরদিকে ঝরে পেঁপে ও কলাগাছ ভেঙে নুইয়ে পড়ে।
কালবৈশাখী ঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে পড়ে গেছে গাছের আম। গাছে থাকা পাকা লিচুরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ধান ও আমের কিছুটা ক্ষতি করলেও অন্যান্য মৌসুমী ফলের জন্য এ বৃষ্টিটা কাজেই লাগবে।
ঢাকায় রাত সাড়ে ৭টা অবধি চলে বিরামহীন বর্ষণ। হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন ঢাকাবাসী। রাস্তায় কমে যায় যান চলাচল। বিপদে পড়েন বাসায় ফেরা মানুষ। বিশেষ করে মেয়েরা বেশ বিপদেই পড়েছিলেন। ভীড়ের বাসে উঠতে পারছিলেন না। আবার রিকসার ভাড়া ছিল আকাশ ছোঁয়া। খোলা রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে কম ভাড়ার রিকসা পেতে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। গাড়ি কম হওয়ায় পুরুষের একই অবস্থা ছিল সন্ধ্যার আগে ও পরে।
ভীড়ের বাসে গাদাগাদি করে পুরুষরা চলাফেলা করতে পারলেও মহিলারা উঠতে পারছিলেননা। বাধ্য হয়ে রিকসা করে যেতে হয়েছে। নিচু এলাকার বাসিন্দারা যেমন বেশ কিছুক্ষণ পানির সাথে কাটাতে হয়েছে আবার নিচু এলাকার বস্তিবাসীর ঘরে ঘরে ঘে ঢুকে পড়েছে পানি। ঢাকার ভাসমান মানুষ ভীড় করেছে বিভিন বিভিন্ন ছাউনী দেয়া আশ্রয়ে। যেমন কমলাপুর রেলস্টেশনে ভাসমান মানুষের ভীড় ছিল উল্লেখযোগ্য হারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যশোর, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝরো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত: শুস্ক থাকতে পারে। অপরদিকে রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলসহ খুলনা ও রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
– See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/22777#sthash.UYNaYX5s.dpuf