যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবারো রাতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিন রাতে হবে এই পরীক্ষা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। শনিবার রাতে এসব পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। কুষ্টিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা তিনটি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খ্রিস্টান ধর্মের একটি সম্প্রদায়ের নাম সেভেনথ ডে অ্যাডভান্টিস্ট। এই সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় বিধানমতে শনিবার দিনের বেলায় জাগতিক কোনো কাজ করেন না। তারা এদিন ধর্মীয় কাজে সময় ব্যয় করেন। এ কারণে দিনের বেলায় পরীক্ষা দেয়াও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বারণ বলে তাদের দাবি।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের আওতায় এই ধর্মের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে এবার। তার নাম অ্যালবার্ট স্মিথ বালা। বাবার নাম সুখলাল বালা। মায়ের নাম মেরি বালা। স্কুলের নাম সানআপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলটি কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অ্যালবার্ট স্মিথ বালার তিনটি পরীক্ষা শনিবারে পড়েছে। এ কারণে তার পক্ষে দিনের বেলায় ওই তিনটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অসম্ভব বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা তিনটি হচ্ছে, ১৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ২৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পদার্থ বিজ্ঞান ও ১ অক্টোবর (শনিবার) উচ্চতর গণিত।
এ তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা রাতে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী কেন্দ্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে রাতে পরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত মানতে হবে পরীক্ষার্থীকে। শর্তের মধ্যে রয়েছে, শনিবার সকাল ১১টার মধ্যে পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এরপর তাকে অবস্থান করতে হবে নির্ধারিত একটি কক্ষে। পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের পর পরীক্ষার্থীর কাছে প্রবেশপত্রে উল্লেখিত জিনিসের বাইরে কোনোকিছু থাকতে পারবে না। কোনো অবস্থায় পরীক্ষা কেন্দ্রের নির্দিষ্ট কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না এবং বাইরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। বিষয়টি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সানআপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করেছে শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা বিভাগ।
এর আগে ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রাতে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করে যশোর শিক্ষাবোর্ড। ওই বছর বোর্ডের অধীন ১০ জেলায় পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ২৯০ জন। ওইসব পরীক্ষার্থী মধ্যে একজন ছিল সেভেন্থ ডে অ্যাডভান্টিস্ট সম্প্রদায়ের। ওই পরীক্ষার্থীর নাম ছিল রিকি হালদার। সে কুষ্টিয়ার কুমারখালি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিল। রিকি হালদার নামে ওই পরীক্ষার্থী সে সময় শনিবারের পরীক্ষা রাতে গ্রহণ করার জন্য শিক্ষাবোর্ড বরাবর আবেদন করেছিল। আলাপ আলোচনা করে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় বিধিবিধানের বিষয়টি আমলে নিয়ে রিকি হালদারের আবেদনটি গ্রহণ করে। এ কারণে ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলা পরীক্ষা সকাল ১০টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রহণ করে। একইভাবে ৯ ফেব্রুয়ারি গণিত, ১৬ ফেব্রুয়ারি রসায়ন ও ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চতর গণিত পরীক্ষা একইভাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। এসএসসি পরীক্ষায় রিকি হালদারের রোল নম্বর ছিল ১১১৩৫২ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৫১৩৬০৪৫২২ ছিল। ওইসময় রাতে পরীক্ষা গ্রহণ করার বিষয়ে লিখিত আদেশ জারি করে শিক্ষাবোর্ড। যার স্মারক নম্বর ছিল পনি/পিএ/৩৮৪। রিকি হালদার কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার পারফেক্ট ইংলিশ ভার্সন স্কুলের পরীক্ষার্থী ছিল। কুমারখালি কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ফিরোজ মোঃ বাশার রাতে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি সেই সময় নিশ্চিত করেন।
এসএসসি পরীক্ষায় রাতে একজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সকলকেই শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষার তালিকায় যাদের থাকতেই হবে তাদের মধ্যে কেন্দ্র সচিব, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, হলসুপার, সহকারী হলসুপার, কক্ষ পরিদর্শক ও এমএলএসএস অন্যতম।
যশোর শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬৩ সালে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম রাতে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এর আগে কোনো দিন কোনো পরীক্ষার্থীর রাতে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তবে ২০১৮ সালের জেএসসিতে সেভেন্থ ডে অ্যাডভান্টিস্ট সম্প্রদায়ের একজন পরীক্ষার্থী ছিল বলে ওইসময় জানিয়েছিল যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা বিভাগ। তার পরীক্ষাও রাতে গ্রহণ করা হয়েছিল।