মিয়ানমারের ছোড়া গোলা যাতে সীমান্ত অতিক্রম না করে সে ব্যাপারে সংযত হতে দেশটির রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
খুব শিগগিরই এ বিষয়ে মিয়ানমার সংযত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্বরাষ্টমন্ত্রী। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দেশের সব পর্যায় থেকে আরও কঠোর প্রতিবাদ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে দু-একটি গোলা আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি এসে পড়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমাদের বিজিবি (সীমান্তরক্ষী বাহিনী) তাদের বিজিপির (সীমান্তরক্ষী বাহিনীর) কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মেসেজ দেয়া হয়েছে, সবকিছু বলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সব পর্যায়ে প্রতিবাদ করেছি। আমরা মনে করি শিগগিরই তারা সংযত হবে। তাদের গোলাগুলি যেন এদিকে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য আমরা তাদের বলেছি।
মিয়ানমার বারবার একইভাবে গোলা ফেলছে। সেক্ষেত্রে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তোলা হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা তো তাদের (মিয়ানমার) প্রথমে ডেকে বলেছি। এরপর যদি আসে আমরা বিষয়টি জানাবো।
ঘটনার শুরু আগস্টের ২৮ তারিখ থেকে। ওইদিন বিকেলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মুহুর্মুহু গুলির পাশাপাশি একের পর এক মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা।
এরপরেই বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তে উত্তরপাড়ার নুর আহমদের বাড়ির আঙিনায় দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে, পাশাপাশি আকাশসীমায় একাধিক হেলিকপ্টারকে চক্কর দিতে দেখা যায়। এগুলো ওড়ার সময়ও বন্ধ হচ্ছিল না গুলির শব্দ। বরং গুলির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এ ঘটনার পরেও আবার চলতি মাসের ৬ তারিখে দিনব্যাপী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওইদিন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলা ছোড়ার শব্দ শোনা যায়। একই সঙ্গে আকাশে হেলিকপ্টারও উড়তে দেখা যায়। বাংকার থেকে ছোড়া গোলার বিকট শব্দে কাঁপে সীমান্তের বসতিগুলো।
এর দুদিন আগেও অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বর তুমব্রু পশ্চিমকুল সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে খনন করা হয় বাংকার, রাখা হয় ভারী অস্ত্র। যা দেখা যায় তুমব্রু পশ্চিমকুল সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে।
এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
সবশেষ তৃতীয় দফায় (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের প্রায় ২৫০ গজ ভেতরে কোনারপাড়া এলাকায় শাহজানের বাড়ির সামনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া একে ৪৭-এর একটি গুলি এসে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান তারা। এ সময় তারা ভয়ে ঘরের ভেতরে আশ্রয় নেন। পরে গোলাগুলির আওয়াজ থেমে গেলে কোনারপাড়া এলাকার শাহজাহানের বাড়ির সামনে একে ৪৭-এর গুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরে স্থানীয়রা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে ৩৪ বিজিবির একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানান, ‘আজ বিকেলেও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে কোনারপাড়া এলাকায় একটি গুলি পড়েছে। ৩৪ বিজিবির একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গুলিটি তাদের হেফাজতে রয়েছে।’
উল্লেখ্য, বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে ২২ হাজারের বেশি। আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা।