গাজীপুরে কাপাসিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখল, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ পদ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার ভাই কাপাসিয়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে সদর এলাকায় ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণের একক কর্তৃত্বের অভিযোগ। সাখাওয়াত চেয়ারম্যানের বড়ভাই মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, চেয়ারম্যান তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মির মাধ্যমে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলার সাহস নেই।
কাপাসিয়ার সাফাইশ্রী গ্রামের মৃত আব্দুর রউফের স্ত্রী মিনারা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী নারী যুগান্তরকে জানান, আমার শ্বশুর নগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ গংয়ের কাছ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে ৪৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরে এ জমির জাল দলিল তৈরি করে এক নারী।
তিনি আরও জানান, ওই দলিলটি দাতার মৃত্যুর দুই দিন পর সৃজন করা হয়েছে। তাদের এ জমি দখলে নেতৃত্বে দিয়েছেন চেয়ারম্যান সাখাওয়াত।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ২০১৬ সালে এই জমি দখলের সময় সপরিবারে সাখাওয়াত বাহিনীর কাছে তারা আহত হলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে কোনো মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা করতে গিয়ে আদালত চত্বরে সাখাওয়াত বাহিনী কর্তৃক হুমকি ধমকি ভয়ভীতির কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী আব্দুর রউফ মারা যান।
পরে মিনারা আদালতে জমির জন্য মামলা করেন। আদালত সব মালিকানা কাগজপত্র যাচাই করে চলতি বছর ২২ আগস্ট মিনারা বেগমকে প্রকৃত মালিক হিসেবে রায় প্রদান করেন।
তবে বর্তমানে জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সাখাওয়াত বাহিনীর ভয়ে ওই জমিতে যেতে পারছেন না স্বামীহারা মিনারা বেগম। তিনি চোখের জলে আল্লাহর কাছে স্বামীর মৃত্যুর বিচার চান।
একই কায়দায় আরও কয়েকজনের জমি জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ আছে চেয়ারম্যান সাখাওয়াত ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে। তবে তারা ওই পরিবারের ভয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
সাখাওয়াতদের ৬ ভাইয়ের মধ্যে ওবায়েদ মোক্তার হলেন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার এবং প্যানেল চেয়ারম্যান। এক ভাই মকবুল হোসেন তিনি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অপর দুই ভাই তোফাজ্জল হোসেন ও আমজাদ হোসেন বেলজিয়াম প্রবাসী।
সম্প্রতি কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের বিতর্কিত চেয়ারম্যান সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ এবং পরবর্তী কন্যাসন্তানসহ ভিকটিম ওই গৃহকর্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগ উঠে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, চেয়ারম্যান সাখাওয়াতের প্রভাবে থানা পুলিশও মামলা নেয়নি। পরে ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই গাজীপুরকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় মামলার বাদী চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, ২০১৬ সালে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সাখাওয়াত হোসেনের আর পিছু ফিরে তাকানোর সময় নেই। তিনি এলাকায় অস্ত্রধারী বাহিনীর গড়ে তোলেন এবং দখল বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন। ভাইকে দিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অবৈধ আয়ে কাপাসিয়া শহরে বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি ও গাড়ি করেছেন সাখাওয়াত হোসেন। কাপাসিয়ার রাউতকোনা এলাকায় রয়েছে সাখাওয়াতের ইটের ভাটা। রাজধানীর গুলশানে রয়েছে তার একটি রেস্টুরেন্ট। নিজের নামে স্ত্রীর নামে ও দুই ছেলের নামে কিনেছেন কোটি টাকার মূল্যের জমি; যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।
কাজের বিনিময় টাকা বা কাবিখা ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাবিখা কর্মসূচির নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক জনৈক হারুন মিয়ার ইটের ভাটা থেকে ২৬৪ গাড়ি ইট লুট করে নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হারুন আদালতে মামলাও করেছেন।
যুবলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, কমিটি বাণিজ্য করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাখাওয়াত। সম্প্রতি পদ দেওয়ার নামে যুবলীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করেন এবং সিভির সঙ্গে নির্ধারিত ফিসও গ্রহণ করেন। বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে গেলে তার ওই কমিটি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে কেন্দ্রের নির্দেশে কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসাইন প্রধান বলেন, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। আমি কারো জমি জবরদখল করিনি, আমার বিরুদ্ধে করা ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা, পদ বাণিজ্যের কোনো একটিতেও আমি জড়িত নই। গৃহকর্মী ধর্ষণের বিষয়টিও তিনি ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।
স্বল্পসময়ে এত সম্পদের মালিক কিভাবে হলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চার ভাই আমেরিকা প্রবাসী। তাদের টাকায় আমি এসব করেছি।
অপরদিকে স্থানীয়রা জানান, সাখাওয়াত চেয়ারম্যানের দুই ভাই প্রবাসে থাকেন। তবে তাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কোনো সম্পর্ক নাই।