গাজীপুর: জেলার কাপাসিয়ায় উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষন ও বাচ্চা প্রসবের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগের ভিডিও প্রকাশের পর ভিকটিম নবজাতক সহ উদাও হয়ে আছে। তবে অজ্ঞাতস্থান থেকে ভিকটিমের একটি ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যান যেখানে চেয়ারম্যানকে নির্দোষ বলা হয়েছে। একই ভিকটিমের দৃশমান ও অদৃশ্যমান বিপরীতমুখী বক্তব্য থাকলেও ভিকটিম কোথায় তা চেয়ারম্যান জানেন না বলে জানিয়েছেন।
আজ বুধবার অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, বাচ্চার ডিএনএ টেষ্ট করার পর প্রমান হলে তিনি এর দায় নিবেন। তবে ভিকটিম বাচ্চা সহ এখন কোথায় আছেন তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। অপহরণ বা নিঁখোজ বা উদাও হওয়া অবস্থায় ভিকটিমের ভিডিও বক্তব্য চেয়ারম্যানকে নির্দোষ প্রমান করতে পারবে কি না, তা প্রমান হবে ভিকটিম উদ্ধারে পর।
বুধবার(৩১ আগষ্ট) এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এফ এম নাসিম বলেন, এ রকম ঘটনা শুনেছি। কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে চেয়ারম্যানের দায়ের করা একটি জিডি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ধর্ষনের পর বাচ্চা প্রসব করার অভিযোগ করে ভিকটিম নিখোজ হওয়ার বিষয়টি এলাকায় তোলপাড় ফেলে দিছে। অপরাধ ও অপরাধের আলামত সহ বাদীই নিঁখোজ হওয়ার বিষয়টি রীতিমত চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ ভিকটিম উদ্ধার না করে উল্টো আসামীর জিডি তদন্তের উদ্যোগ নেয়ায় ন্যায় বিচার অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একটি সূত্র বলছে, ভিকটিম উদ্ধারের জন্য একটি মানবাধিকার সংগঠন যে কোন সময় আইনের স্বরনাপন্ন হতে পারে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় ওই সূত্র।
প্রসঙ্গত: গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায় গৃহকর্তা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে বাচ্চা জন্ম দেয়ার অভিযোগ দিয়ে গৃহকর্মীই অপহরণ হয়ে গেছে নবজাতক বাচ্চা সহ। অবশেষে ভিকটিমের ব্যবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া গেলো এক মসজিদের ভেতরে।
১৫ আগষ্ট থেকে ঘটনার ধারাবাহিকতা চলমান থাকলেও ১৭দিনে পুলিশ কোন অভিযোগ পায়নি।
মঙ্গলবার(৩০ আগষ্ট) গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায় গিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিম ভিডিও বক্তব্যে বলেন, তার বয়স ১৬ বছর। সে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। চেয়ারম্যানের স্ত্রী বাসায় না থাকলে চেয়ারম্যান তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করেছেন একাধিকবার। দুই মাস আগে ভিকটিম গর্ভবতি বলে ধরা পড়ার পর একই বাসার পুরুষ কাজের লোক রহিতের সাথে চেয়ারম্যান জোর পূর্বক ভিকটিমকে বিয়ে দেন। চলতি মাসের ১ তারিখ গর্ভবতি ভিকটিমকে চেয়ারম্যান কাপাসিয়ার শীতলক্ষা নদী পাড় করে তরগাঁও খেয়াঘাট নামক গ্রামে জনৈক মমিন মিয়ার বাড়িতে মাসিক ৯’শ টাকায় ভাড়া করে রাখেন। ১৫ আগষ্ট রাতে ভিকটিমের প্রসব বেদনা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলে ১৬ আগষ্ট কাপাসিয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভিকটিম সন্তান প্রসব করেন। অতঃপর সন্তান সহ ভিকটিম ভাড়া বাসায় ফিরে আসেন।
ভাড়া বাসার মালিকের পুত্রবধু আয়েশা আক্তার জানান, এই বাসায় ভিকটিমের কাছে চেয়ারম্যানে স্ত্রী প্রায়ই আসতেন। তিনি আরো জানান, বাচ্চার বাবার নাম যেন তার স্বামী চেয়ারম্যানের নাম না বলেন সেই জন্য ভিকটিমকে চাপ সৃষ্টি করেন ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী।
আয়েশার বক্তব্য মতে, সোমবার(২৯ আগষ্ট) ১৯টি মিডিয়ার সাংবাদিক ভিকটিমের জবানবন্ধী নেয়। এরপর সোমবার রাতেই চেয়ারম্যানের শ্যালক মামুন মিয়া লোকজন নিয়ে এসে ভিকটিমকে বাচ্চা সহ নিয়ে ভাড়া বাসা থেকে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘটনা চেপে যেতে বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিকটিমের বাবা( আইনী কারণে পরিচিতি গোপন) কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড মসজিদে আদায়কারীর কাজ করেন। মঙ্গলবার(৩০ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় কাপাসিয়ায় ওই মসজিদে গেলে মোয়াজ্জিন হাফেজ নাজমুল ইসলাম মসজিদের বরান্দায় রাখা ভিকটিমের ব্যবহৃত ঘরের জিনিসপত্র দেখিয়ে বলেন, এ গুলো রেখে মেয়ে ও বাচ্চা নিয়ে গেছে কে বা কারা। তবে কয়েক দিন ধরে ভিকটিমের বাবা মসজিদে আদায়কারীর কাজে আসেন না বলে জানিয়েছেন মোয়াজ্জিন।
এদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, তিনি এই বাচ্চার বাবা নন। ডিএনএ টেষ্ট করার দাবী করেন তিনি। সাখাওয়াত হোসেন প্রধান কাপাসিয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান ও কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, একটি মেয়ে ধর্ষিত হয়ে সন্তান প্রসব করল, এবং সন্তান সহ ভিকটিম অহপরণ হয়ে গেলো অথচ ১৬দিনেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এই ঘটনা আইনের শাষনের পরিপন্থী ও মানবাধিকারের চরম লংঘন। তারা দ্রুত ভিকটিম ও বাচ্চা উদ্ধার এবং ধর্ষক ও অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
বিষেজ্ঞদের মতে, গর্ভবতি কোন নারীর সঙ্গে বিয়ে হয়না। এই গর্হিত কাজটি করে যারা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।
৩০ আগষ্ট মঙ্গলবার বেলা ১টা ২৫ মিনিটে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য নিতে গেলে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করার সাথে সাথে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধান পরিষদ থেকে বেরিয়ে দ্রুত চলে যান ও যাওয়ার সময় বলেন, নামাজ পড়ে আসি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাখাওয়াত হোসেন প্রধানের পিতার নাম মরহুম সাহেব আলী মোক্তার। সাখাওয়াত হোসেন প্রধান ২০১৬ ও ২০২২ সালে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন। ২০২২ সালে সাখাওয়াতের আপন বড় ভাই ওবায়দুল কবির মোক্তার মেম্বার হন। ছোট ভাই যে পরিষদের চেয়ারম্যান বড় ভাই সে পরিষদের মেম্বার। কাপাসিয়ার রাওতকোনা গ্রামে জন্মগ্রহন করা সাখাওয়াত হোসেন প্রধান চেয়ারম্যান হওয়ার পর কাপাসিয়া শহরে জমি কিনে একটি চারতলা বাড়ি করছেন। সাখাওয়াত হোসেনের প্রথম স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। তারপর তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। লোকজন বলছেন, ঘরে স্ত্রী রেখে বাইরে প্রেম করার কারণে প্রথম স্ত্রী স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জে।
মানুষ বলছেন, কাঁচা টাকার গরমে এমন বড় ধরণের অপরাধ করে থাকতে পারেন। তবে প্রমান হওয়ার আগ পর্যন্ত চেয়ারম্যানকে কেউ অপরাধী মনে করতে নারাজ।