গ্রাম বাংলা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তাঁর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘উনার ভাবি(খালেদাকে উদ্দেশ্য করে), যাঁকে উনি বাড়ি-গাড়ি দিয়েছিলেন, সেই ভাবি উনাকেসহ জাতীয় পার্টির সবাইকে জেলে পুরলেন। এত কবিতা লিখলেন, ভাবীর জন্য একটা কবিতা লিখে মন জয় করতে পারেননি?’
বৃহস্পতিবার দশম সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে মানুষ মেরেছে। বিরোধী দলে থেকেও মানুষ মারছে। এখন প্রতি মুহূর্তে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আন্দোলন মানে তো বোমাবাজি আর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ খুন করা। এ অবস্থা চলুক, তা আমরা চাই না। এ দেশ আমাদের।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল নিরীহ মানুষ হত্যার মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করে দেশ ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা। সে জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের জন্য তারা পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেছিল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচন করেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে দমন করে আমরা গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ খালেদা জিয়ার সাক্ষাত্কার সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বিদেশি পত্রিকায় বক্তব্য দেন। কিন্তু নিজের চেহারা দেখেন না। তিনি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন, নাকি নিজে লিখেছেন, জানি না। তবে ছাপা হয়েছে সাক্ষাত্কার আকারে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি কিছু করেনি। উনিই নাকি সবকিছু করেছেন। কিন্তু উনি কী করেছেন, তা তো দেশের মানুষ জানে। সংখ্যালঘুদের জন্য তিনি মায়াকান্না করছেন। হত্যা, খুন আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দোষ চাপিয়েছেন আওয়ামী লীগের ওপর।’ এ সময় তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আলোকচিত্র সংসদে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। দক্ষিণ এশিয়ার সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়াই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত মামলার রায় রায় চলতি সপ্তাহে দেওয়া হবে।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার পরও কিছু ঘটনা ঘটেছে ফেনী ও নরায়ণগঞ্জে। এতে আমরা আমাদের লোক হারিয়েছি। কিন্তু আমরা বসে নেই। আইন তার নিজের গতিতে চলবে। অপরাধী অপরাধীই। তাদের বিচার হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
বক্তব্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব সময় চাইতাম গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। কিন্তু অস্ত্র, টাকা, মাদক ও ঋণখেলাপি সৃষ্টি করেছিল সেনা শাসকেরা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে পাকাপোক্ত করতে ধনিক শ্রেণী তৈরি করেছিলেন। ‘৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত ১৯ বার ক্যু হয়েছিল। প্রতিবারই শত শত সেনাসদস্য হত্যা করা হয়েছিল। একবার বিমান বাহিনীরই ৫৬২ জনকে হত্যা করা হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, ঠিক একইভাবে ক্ষমতা দখল করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বঙ্গভবনে গিয়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে বললাম, আপনি কারও প্রার্থী হবেন না। জনগণের প্রার্থী হোন। আপনি পলাশী প্রান্তর থেকে শিক্ষা নেন। মীরজাফর হবেন না। তিন মাসও টিকতে পারবেন না। কিন্তু এরশাদ সাহেব ঘোষণা দিলেন, সাত্তার উনার প্রার্থী। সেনাপ্রধান হয়ে তিনি এভাবে ঘোষণা দিতে পারেন কি না, সেটা প্রশ্ন। তারপর খালেদা জিয়া সাত্তার সাহেবের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেন। এরশাদ সাহেবের হয়তো মনে আছে, যা হওয়ার তা-ই হলো। তখন নির্বাচন কমিশনের হাত-পা বাঁধা ছিল। সাত্তার সাহেবকে সরিয়ে আহসান উল্লাহ সাহেবকে আনা হলো। সামরিক শাসন জারি হলো। আমাদের গ্রেপ্তার করা হলো। অনেক রক্ত নিয়ে ’৮৬ সালে নির্বাচন হলো। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে উনাকে (এরশাদ) পদত্যাগ করতে হতো না।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত এক হলে আমরা ক্ষমতা দখল করতে পারতাম। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব আমাকে ডেকেছিলেন। কিন্তু আমরা নীতিগত কারণে রাজি হইনি।’