পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের কলেজছাত্র পারভেজ মোশারফ। এ পদ্ধতিতে উৎপন্ন হচ্ছে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও গ্যাস। তার এ কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, বড় টিনের ড্রামে পলিথিন ভরে মুখ বন্ধ করে আগুনের তাপ দেয়া হয়। তাপে ড্রামের সঙ্গে লাগানো পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা পদার্থ প্রথমে পানিভর্তি একটি ছোট ড্রামে পাইপের মধ্যেই কিছুটা শীতল করা হয়। তারপর সেই পাইপ দিয়ে আলাদা আলাদা পাত্রে প্রথমে ডিজেল, পরে পেট্রোল তারপর অকটেন এবং সবশেষ বের হয়ে আসে গ্যাস।
১০০ টাকা লিটার বিক্রি করা এ অকটেন, পেট্রোলে চলছে মোটরসাইকেলও। পারভেজের এ কাজে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন বন্ধু ও প্রতিবেশীরাও।
মোশারফ বলেন, মূলত বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা অব্যবহৃত পলিথিনের ক্ষতিকারক দিক থেকে প্রকৃতি রক্ষা এবং দেশে চলমান জ্বালানি তেলের সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে এ উদ্যোগ। এতে বেশ সাড়াও পেয়েছি।
পারভেজ আরও জানান, এক মণ পলিথিন দিয়ে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন মিলে ৩০ লিটার তেল উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি জ্বালানি গ্যাসও উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হবে। এখানে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও সম্ভব হবে।
মোশারফের বন্ধু সাকিল বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পারভেজের এ কাজটি অবশ্যই ভালো। এখানে উৎপন্ন জ্বালানি তেল দিয়ে স্থানীয় মোটরসাইকেল চলছে। এতে সামান্য হলেও পেট্রোলের চাহিদা মিটছে। আমরা আরও কয়েক বন্ধু মিলে তাকে সহযোগিতা করছি।’
জ্বালানি তেলের এ সংকটকালে জেলার সীমান্তঘেঁষা মইদাম গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে ও মইদাম মহাবিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পারভেজের এমন কাজে উৎসাহ জুগিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন তার শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এ ব্যাপারে মইদাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মইদাম গ্রামটি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার সীমান্তঁঘেষা একটি গ্রাম। এখানে আমার ছাত্র পারভেজ মোশারফ পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে যেভাবে একসঙ্গে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন তৈরি করছে, এটা সত্যি প্রশংসনীয়। আমার ছাত্র হিসেবে আমিও গর্বিত। এর ফলে একদিকে যেমন পরিত্যক্ত পলিথিনে প্রকৃতির ক্ষতি কমে আসবে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের ঘাটতি কমে আসবে। আমি তার এ কাজকে দেশবাসীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সে যেন বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সহযোগিতা কামনা করছি।’
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর জানান, এভাবে তেল উৎপাদনে যদি আইনি কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে তেলের এই উচ্চমূল্যেও বাজারে পারভেজের মতো দেশের সব স্থানে পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে তেল উৎপাদন করলে দেশে জ্বালানি তেলের সমস্যা কিছু সমাধান হবে।
এ পদ্ধতিতে এক মণ পরিত্যক্ত পলিথিন পোড়ালেই উৎপন্ন হবে ৩০ লিটার জ্বালানি তেলের পাশাপাশি গ্যাস। আর এতে সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে এক হাজার টাকার বেশি।