ছেলে মাদকসহ আর মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে, এমন বানোয়াট তথ্য দিয়ে অভিভাবকদের ফোন দেন তিনি। ছাড়িয়ে নিতে দাবি করেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তাই নয়, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ময়মনসিংহের বিনি আমিন নিজ এলাকার কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা। এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার দুর্গ গড়ে তুলেছেন বিনি আমিন। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
মাদকসহ ধরা পড়েছেন ছেলে, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এমন ফোন আসে তার মায়ের কাছে। বলা হয় ৬০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। পেশায় চিকিৎসক মা ছেলেকে বাঁচাতে কোনো রকম যাচাই না করেই পুলিশ পরিচয় দেয়া ব্যক্তির নগদ অ্যাকাউন্টে ৩০ হাজার করে পাঠিয়ে দেন ৬০ হাজার টাকা।
ছেলে মাদকসহ, আর মেয়ে হলে অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে- এমন ফোন পেয়ে টাকা দিয়েছেন অনেকেই। এই তালিকায় যেমন আছেন চিকিৎসক, আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলীও। তারা মূলত প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ভুয়া এই গোয়েন্দা পুলিশের খোঁজে নেমে সত্যিকার গোয়েন্দাদের ঘুম হারাম। প্রতারক এতটাই ধূর্ত যে তাকে শনাক্ত করেও সেই ঠিকানায় গিয়ে আর পাওয়া যায় না। পুলিশের গতিবিধিও তার নজরদারিতে।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ময়মনসিংহ থেকে এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম আল আমিন ওরফে আমিন ওরফে বিনি আমিন। নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বছরের পর বছর এই অপকর্ম করে আসছিল সে।
পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন বিনি আমিন। ফলে অভিযানে গিয়ে পুলিশকে পড়তে হয় বেকায়দায়। তার একটি নম্বরে গত চৌদ্দ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনেদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর পুলিশের খুব একটা নজরদারি না থাকায় এ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা হচ্ছে। আর বিনি আমিন যে পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে এতে যে কাউকে ফোন করলে সহজেই ঘাবড়ে যাবে। ফলে চাওয়া মাত্রই টাকা পেয়ে যায় সে।
প্রতারণার মাধ্যমে বিনি আমিনের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ৮২ লাখ টাকা ও অপর অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ লাখ টাকা পাওয়ার তথ্যও জানিয়েছে পুশি। অর্জিত টাকা দিয়ে বিনি আমিন বিপুল সম্পত্তির মালিকও হয়েছেন।
পুলিশ বলছে, একটি ব্যক্তিগত নম্বরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য গোপন করার দায় এড়াতে পারে না মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।