প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের। কোভিড-১৯ এর আঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি, খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সব পর্যায়ে ব্যয়-সাশ্রয় ও কৃচ্ছ্র সাধনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে চাহিদানুযায়ী খাদ্যদ্রব্য, নিত্যপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, বালাইনাশক ও কৃষি উপকরণসহ অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনকল্যাণে সরকারের এ সব নির্দেশনা ও পদক্ষেপ সর্বস্তরে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের গুরত্বারোপ করে মাঠ প্রশাসনে ৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে জারিকৃত নির্দেশনানুযায়ী সব সরকারি দফতরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫% বা ততোধিক কমিয়ে আনার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ অপব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো (যেমন : প্রাধিকারের বাইরে শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ-বাতি প্রজ্বলন, গিজার, বৈদ্যুতিক কেটলি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের অধিক বা অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ইত্যাদি) চিহ্নিহ্নহ্নত করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানির ব্যবহার ২০% বা ততোধিক কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গৃহীত ব্যবস্থা চলমান রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দকৃত জ্বালানির অপব্যবহার (যেমন : অগুরুত্বপূর্ণ কাজে সরকারি গাড়িযোগে ভ্রমণ, ব্যক্তিগত কাজে বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি গাড়ির ব্যবহার, প্রাধিকার বহির্ভূত সরকারি গাড়ি বরাদ্দ ইত্যাদি) রোধকল্পে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৪৪ ধারার বিধান যথাযথভাবে পরিপালনপূর্বক সারা দেশে রাত ৮টার মধ্যে দোকান শপিংমল মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈদেশিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ অনুপুঙ্খ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে, এক্সপোজার ভিজিট/স্টাডি ট্যুর/এপ্রি/ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং প্রশিক্ষণ/ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ ইত্যাদিসহ সমরূপ সব বৈদেশিক ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপণ্যের কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি, মজুদদারি ও মূল্যবৃদ্ধিসহ যেকোনো অপতৎপরতা রোধকল্পে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে সার, বীজ, কীটনাশক, বালাইনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আসন্ন আমন ও রবি মৌসুমের প্রস্তুতিকালে কৃষক পর্যায়ে সার, বীজ, কীটনাশক, বালাইনাশকসহ অন্যান্য কৃষ উপকরণের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে জোরদার মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এসব পণ্যের কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি বা মূল্যবৃদ্ধির যেকোনো অপপ্রয়াস রোধকল্পে সার্বক্ষণিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অর্থে ব্যয়-সাশ্রয় ও কৃচ্ছ্র সাধনে সরকারের নির্দেশনাগুলো অনুপুঙ্খ পরিপালনপূর্বক সামষ্টিক উদ্যোগে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।