জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের সব খাতে। বেড়ে গেছে প্রায় সব পণ্যের দাম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সামগ্রিকভাবে জীবযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যাবে। পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যের উত্পাদন খরচ বাড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সব প্রকার পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব বাজারে পড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গত এক সপ্তাহে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ, আদা, এলাচ, ব্রয়লার মুরগি, চিনি ও ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে কাঁচা মরিচ, শাকসবজি, মাছ, দেশি মুরগি, ফলমূলসহ অন্যান্য খাদ্যের দামও বেড়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা ও পেঁপে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৬০ টাকা কেজি দরে ধুন্দল, পটল ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শসার দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কেজিপ্রতি বেগুনের দাম লাগছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। করলা ও ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউ আকারভেদে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি ও বরবটি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি লেবু ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং কাঁচকলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি আদার দাম পড়ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮৭ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি মসুরের ডাল ১৪০ টাকা এবং ভারতীয় মসুরের ডালের দাম লাগছে ১১০ টাকা। প্রতি কেজি খোলা আটা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিমের দাম পড়ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও লেয়ার মুরগি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে ৭০০ টাকা কেজি গরুর মাংস এবং ৯০০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি রুই মাছ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি শিং মাছ ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা এবং কৈ মাছ কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির একটি ইলিশের দাম পড়ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।
এদিকে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৯ থেকে ৭০ টাকা, বিরি-২৮ চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেমন নজরদারি প্রয়োজন সেটা নেই। দেশে এখন যে নজরদারির চর্চা আছে, সেটা লোক দেখানো।
এসব বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যৌক্তিক কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিকভাবে যা বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতাকে তারা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারকে এখন অত্যন্ত কঠোর হতে হবে, তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।