বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলার ভোলা, নোয়াখালী ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে উত্তাল হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগর। এর মধ্যে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে অন্তত ৬টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। এসব ট্রলারের জেলেদের মধ্যে ৫৬ জনকে উদ্ধার করা গেলেও এখনো অন্তত ১৯ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে মাছ ধরতে গিয়ে চরফ্যাশন উপজেলার বয়ার চরে আবুল কালাম ও মো: ইউসুফ মাঝির দুটি ট্রলার ডুবে যায়। খবর পেয়ে অন্য ট্রলারের মাঝিরা ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এখনও ইউসুফ মাঝির ট্রলারের ৮ জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও দৌলতখানের এক জেলে দু’দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ভেসে গেছে জাল ও ট্রলারসহ মালামাল। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কাজ করছে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভোলার বেড়িবাঁধগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও ভেঙ্গে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে জোয়ারে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট তলিয়ে গেছে। ফলে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল।
ট্রলারডুবি : সাগরে নিখোঁজ ১৯ জেলে
বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে দুইদিনে মাছ ধরতে যাওয়া ৩টি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৯ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরের শিবচর, মহিপুর পয়েন্টে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।
ঢালচরের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, মঙ্গলবার ঢালচর থেকে আবুল কালাম, ইউসুফ মাঝির দুটি বোট মাছ ধরতে সাগরে যায়। মাছ ধরতে গিয়ে ১২ জেলে নিয়ে সাগরে ধমায় (ঢেউয়ের কবলে পড়ে) ডুবে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী আরেকটি ট্রলার এসে উদ্ধার করে।
একই এলাকার ইউসুফ মাঝির ১৩ জন জেলের আরেকটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে ৫ জন জেলে উদ্ধার হলেও এখনো পর্যন্ত ৮ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এরা হলেন মো: আব্দুর রহমান, ইসমাইল, রাছেল, তসলিম, আব্দুল মান্নান, জুয়েল, নজু, ছাদেক।
অপরদিকে সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে ইসমাইল মাঝির একটি ট্রলার ডুবে গিয়ে নিজাম (৩২) নামের এক জেলে সাগরে ডুবে নিখোঁজ হয়।
ভোলার চর আইচার মৎস্য ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন কাজী বলেন, নদীতে মাছ না থাকায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ভোলার ঢালচরের আবু কালাম, ইউসুফ মাঝি ও দৌলতখানের ইসমাইল মাঝি ফিসিং বোটটি গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করার জন্য যায়। নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় ৩টি ট্রলার ডুবে যায়। এই ঘটনায় স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় ২৫ জন জেলে উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে ইউসুফ মাঝির ফিসিং বোটের ৮ জেলে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারের নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করতে কোস্ট গার্ডকে বলা হয়েছে। তারা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, তবে বৈরী আবহাওয়ায় উদ্ধার অভিযান বিঘ্ন হচ্ছে।
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে: কমান্ডার সৈয়দ তৈমুর রহমান বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সাগরের মাছ ধরতে গিয়ে ভোলার দৌলতখান, ঢালচর, নোয়াখালীর হাতিয়া, পটুয়াখালীর ২টি, সর্বোমোট ৬টি ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। এসব ট্রলারে সর্বমোট ৭৫ জন জেলে ছিলো। এর মধ্যে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় ৫৬ জন জেলেদের জীবিত উদ্ধার হয়। এখন ভোলার ৯ জনসহ ১৯ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন ৬টি উদ্ধার টিম নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পূর্ব ও পশ্চিম জোন সমুদ্রে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কোস্টগার্ড ঝুঁকি নিয়ে নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।