ইরানে বহু মেয়েকে বিয়ের আগে তার কুমারীত্ব প্রমাণ করতে হয়। তরপরও সন্দেহের কোপে পড়ে অনেক নারীর দাম্পত্য জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে।
ইরানে বিয়ের আগে নারী এবং তার পরিবারের জন্য সতীত্ব বা কুমারীত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখনও অনেক পুরুষ বিয়ের আগে কনের সতীত্বের সার্টিফিকেট বা সনদ চায়, যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে দিয়েছে, এমন পরীক্ষার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এটি নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন।
ইরানে গত কয়েক বছর ধরে বিয়ের আগে নারীদের সতীত্ব প্রমাণের এই পুরনো প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রচারণা বাড়ছে।
“তুমি কুমারীত্ব হারিয়েছিলে বলেই আমাকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করেছো। তোমার আসলটা জানলে কেউই তোমাকে বিয়ে করতো না।”
বিয়ের পর প্রথম যৌনমিলনের পর মরিয়ামের স্বামী তাকে এই কথাই বলেছিল।
মারিয়াম তার স্বামীকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে যে তার যোনিপথ দিয়ে রক্ত না বের হলেও বিয়ের আগে কখনই কারো সাথেই তার কোনো যৌনমিলন হয়নি।
কিন্তু স্বামী তাকে বিশ্বাস করেনি এবং প্রমাণ দেখাতে তাকে সতীত্বের সার্টিফিকেট আনতে বলে।
ইরানে এ ধরণের ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাগদানের পর অনেক নারী ডাক্তারের কাছে গিয়ে কুমারীত্বের পরীক্ষা করায় যেন স্বামী কাছে প্রমাণ করতে পারে যে বিয়ের আগে তার কোনো যৌনমিলন হয়নি।
ডব্লিউএইচও বলে, এ ধরণের কুমারীত্ব পরীক্ষার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এ পরীক্ষা দিয়ে যৌনমিলন নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
মারিয়ামের সতীত্বের সনদে লেখা ছিল যে তার হাইমেন বা যোনিপথের পর্দা অনেকটা ইলাস্টিকের মত। ফলে, যৌনমিলনের পরও তা ফেটে রক্তপাত হয়নি।
“পুরো বিষয়টি আমার সম্মানে খুব লাগে। আমি কোনো অন্যায় করিনি, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে দিনের পর দিন অপমান করেছে,” বলেন মারিয়াম। “এক পর্যায়ে আমার আর সহ্য হচ্ছিল না। একদিন ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করি।” সময়মত হাসাপাতালে নেওয়ার তার প্রাণ রক্ষা পায়। “ঐ অন্ধকার দিনগুলোর কথা আমি ভুলবো না। কদিনে আমার ওজন ২০ কেজি কমে গিয়েছিল।”
মারিয়ামের এই কাহিনী ইরানের আর বহু নারীর মতই। অনেক নারী এবং তাদের পরিবারের জন্য বিয়ের আগে কুমারীত্ব প্রমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রীতির শেঁকড় সেদেশের রক্ষণশীল সংস্কৃতির অনেক গভীরে প্রোথিত।
ইরানে অনেক পুরুষ বিয়ের আগে কনের সতীত্বের সনদ দেখতে চান। তা জোগাড়ে অনেক নারীকে প্রচুর খরচ করতে হয়
তবে সম্প্রতি হাওয়া ধীরে হলেও বদলাতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক নারী ও পুরুষ এ ধরণের সতীত্বের পরীক্ষা এবং সার্টিফিকেট নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন।
গত নভেম্বরে অনলাইনে সতীত্ব পরীক্ষা নিষিদ্ধের একটি পিটিশনে এক মাসের মধ্যে ২৫,০০০ লোক সমর্থন জানায়। এই প্রথম ইরানে এত মানুষ এ ধরণের রীতি খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করলো।
“এই রীতি একজন নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং তার মর্যাদার লঙ্ঘন”, বলেন নেদা।
তেহরানে তিনি যখন ১৭-বছরের ছাত্রী তখন এক ছেলে বন্ধুর সাথে তার প্রথম যৌনমিলন হয়। “পরপরই আমার ওপর আতংক ভর করে। পরিবার জানতে পারলে কী হবে এই ভেবে ভয়ে সিঁটকে গিয়েছিলাম।”
সুতরাং, নেদা অপারেশন করে তার যোনী-পর্দা জোড়া লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও এ ধরণের অপরেশন ইরানে নিষিদ্ধ নয়, তবে জানাজানি হলে তার ঝক্কির কথা ভেবে কোনো হাসপাতাল তা করতে রাজী হয়নি।
শেষে একটি বেসরকারি ক্লিনিক প্রচুর পয়সার বিনিময়ে গোপনে যোনী পর্দা জোড়া দেওয়ার ঐ অপারেশন করতে রাজী হয়।
“আমি আমার সব জমানো পয়সা খরচ করলাম। ল্যাপটপ বিক্রি করলাম। মোবাইল ফোন, গহনা সব বিক্রি করলাম,” বলেন নেদা।
অপারেশনে কোনো ঝামেলা হলে তার সব দায় নেয়ার একটি মুচলেকায় সইও করেন নেদা। একজন ধাত্রী ৪০ মিনিট ধরে অপারেশন করেন। সুস্থা হতে কয়েক সপ্তাহ লেগেছিল তার। “এত ব্যাথা হতো যে আমি পা নাড়াতে পারতাম না।” পুরো ঘটনা পরিবারের কাছ থেকে গোপন রাখে সে। “খুব নিঃসঙ্গ বোধ করতাম। কিন্তু বাবা-মা স্বজনরা জানলে কী হবে এই ভয়ে ব্যাথ্যা সহ্য করতাম।”
কিন্তু এত কষ্ট দুর্ভোগের ফল সে পায়নি। এক বছর পর এক ছেলের সাথে তার পরিচয় হয় যে তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়। কিন্তু প্রথম যৌনমিলনের পর তার কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি কারণ, যোনী-পর্দা জোড়া দেওয়ার অপারেশনে কাজ হয়নি। “আমার ঐ পুরুষ বন্ধু আমাকে দোষারোপ করলো যে আমি তাকে ঠকাতে চেয়েছি। সে আমাকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিয়ে ছেড়ে চলে গেল।”