কওমি মাদরাসার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়ে বিপাকে পড়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির ও গাজীপুরের দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টদের অবগতি ছাড়া এই চিঠি দেন দেওনার পীর। আর এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। ফলে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে তার পরিচালিত‘মাদরাসা দাওয়াতুল হক দেওনা’র নিবন্ধন।
গত রোববার কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশে’র (বেফাক) খাস কমিটির এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেফাকের সহ-সভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআ’তিল কওমিয়ার সদস্য মাওলানা মুছলেহ উদ্দিন গহরপুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, সংশ্লিষ্টদের অবগতি ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরারব চিঠি দেয়াকে বোর্ড নিয়মবহির্ভূত বলে মনে করে। বিষয়টি সমাধানের জন্যই মূলত দেওনার পীর সাহেবের মাদরাসার নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
তবে যারা বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মাওলানা মুছলেহ উদ্দিন। তিনি বললেন, ব্যাপারটিকে খুব বড় করে দেখছি না। এটি নিয়মতান্ত্রিকতার অংশ। উনি (অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী) সম্মানিত ব্যক্তি। কোনোভাবেই তার সম্মান নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করব না। এটি আমাদের আকাবিরদের শিক্ষা নয়। তিনি নিয়ম অনুসরণ করে ফের তার পরিচালিত মাদরাসার নিবন্ধন ফিরে পেতে পারেন।
ওই নিয়ম কী- যার মাধ্যমে তিনি নিজ মাদরাসার নিবন্ধন ফিরে পাবেন- এ ব্যাপারে ওই বেফাক কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড থেকে তাকে চিঠি দেয়া হবে এবং তিনি বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করলে সমাধানের বিষয়টি সামনে আসবে।
এ বিষয়ে দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা সত্ত্বেও রিসিভ করেননি তিনি।
উল্লেখ্য, কওমি মাদরাসার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির ও গাজীপুরের দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। হেফাজত নেতার এ চিঠি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণে সভা ডাকা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি সামনে আসার পরই এ নিয়ে কওমি মাদরাসার আলেমদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা যায়, গত ২৫ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি দেন হেফাজতের এই নেতা। ‘কওমি ধারার দ্বীনি শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়নকল্পে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ’ শীর্ষক চিঠিতে মিজানুর রহমান আটটি সুপারিশ করেন।
এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কওমি মাদরাসার বোর্ডপ্রধানদের একটি বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় কওমি আলেমদের মধ্যে।
পরে আপত্তির মুখে কওমি মাদরাসার শিক্ষা বোর্ডগুলোর সাথে পূর্বনির্ধারিত ১০ আগস্টের বৈঠক স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপসচিব শামীম হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার সকালে অনুষ্ঠেয় সভাটি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো।
তবে এই সভা স্থগিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডগুলোর নেতাদের বৈঠক যাদের কারণে স্থগিত হলো, তারা কওমি মাদরাসার উন্নতি চায় না। তার মতে, বৈঠকটি স্থগিত না হলে দেশের কওমি মাদরাসার মানোন্নয়নে অনেক যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত আসত।