লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির সাবেক গেরিলা নেতা গুস্তাভো পেত্রো। রোববার সকালের দিকে রাজধানী বোগোটার বলিভার প্লাজায় প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছেন দেশটির বামপন্থী গেরিলা সংগঠন এম-১৯ এর সাবেক এই সদস্য।
শপথগ্রহণের পর ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভক্ত দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশটির সংঘবদ্ধ অপরাধী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশাও প্রকাশ করেছেন পেত্রো।
কলম্বিয়ার এই প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় এক লাখ আমন্ত্রিত অতিথি। তাদের মধ্যে স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠসহ লাতিন আমেরকিার অন্তত ৯টি দেশের প্রেসিডেন্ট ও কলম্বিয়ার অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শপথের পর উদ্বোধনী বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পেত্রো। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি দুটি দেশ চাই না। এমনকি আমি বিভক্ত দুটি সমাজও চাই না। আমি এক শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ কলম্বিয়া চাই। জাতি হিসেবে আমাদের যে চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষা রয়েছে তা ঐক্য এবং মৌলিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে।’
৬২ বছর বয়সী দেশটির সাবেক এই সিনেটর কলম্বিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (ইএলএন) সঙ্গে ভেস্তে যাওয়া শান্তি আলোচনায় পুনরায় শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া ২০১৬ সালে আরেক গেরিলা গোষ্ঠী ফার্কের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিও পুনরায় কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেই সময় ফার্কের অনেক সদস্য শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকার সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীগুলোর সাথে সংলাপ করবে এবং মাদক পাচারের তথ্যের বিনিময়ে গোষ্ঠীগুলোর
সদস্যদের সাজা কমিয়ে দেবে। পেত্রো বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শান্তিচুক্তি মেনে নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেছেন, প্রায় ৫ কোটি মানুষের এই দেশে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইও তার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। দেশটির প্রায় অর্ধেক নাগরিক দারিদ্রের কোনও না কোনও স্তরে বসবাস করেন। তবে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
বোগোটার সাবেক মেয়র পেত্রো ভেনেজুয়েলার সাথে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও কনস্যুলার সেবা ফের চালু হবে।
লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে গত ২৯ মে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জয়ী হলেও প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হন পেত্রো। পরে গত ১৯ জুন দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন সাবেক এই গেরিলা যোদ্ধা।