বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াযাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দিয়ে হত্যা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার একটি অভিযোগপত্র বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং অন্যটি হত্যা ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধার অভিযোগে। বাস পোড়ানোর ঘটনায় এই প্রথম হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তদন্ত কর্মকর্তা পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন। আগামী ২৮ মে এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
অভিযোগপত্রে খালেদাসহ ৩১ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। রুহুল কবীর রিজভীসহ সাতজন কারাগারে আটক আছেন। এমনি নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদকেও আসামি করা হয়েছে।
আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন: যাত্রাবাড়ীর সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন আহমদ, তাঁর ছেলে তানভীর আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, শওকত মাহমুদ, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সহসম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শরাফত উল্লাহ, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়া, নবীউল্লাহ নবী, সাবেক কমিশনার কাইয়ুম ও আবদুল লতিফ, আতিকুল্লাহ, বাদল সরদার, আলমগীর, হাজি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জামালউদ্দিন, জাকির, সোহেল খান, মীর নেওয়াজ আলী উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া হামলায় মাঠপর্যায়ের সমন্বয়কারী সোহাগ, লিটন ওরফে সাব্বির, রফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুমকেও আসামি করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ‘বোমা রাসেল’ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় আসামির তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই তিনি নেই। আসামিদের মধ্যে সোহাগ ও লিটন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এতে তাঁরা বিএনপির বিভিন্ন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার জন্য চার হাজার টাকা দিয়ে তাদের নিয়োগ করা হয়েছিল।
বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দীন খোকন এই অভিযোগপত্রের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মানুষ জানে, ওই সময় খালেদা জিয়াকে বালুর ট্রাক দিয়ে কার্যালয়ের গেট আটকে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এখন আবার সেই পুলিশই অভিযোগপত্র দিয়েছে। এই অভিযোগপত্র হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে পুলিশকে নগ্নভাবে ব্যবহার করার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি খালেদা দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার দুই দিন আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের পাশের একটি বাসায় বৈঠক করে ওই হামলার ছক চূড়ান্ত করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ বেশ কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা। যাত্রাবাড়ী এলাকার জনি নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে মাঠপর্যায়ের হামলার বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। লেগুনাচালক শহীদুল্লাহ, বোমা রাসেল, সাব্বির, সোহাগ ও পারভেজসহ কয়েকজন গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত ছিলেন।
২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীতে গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় ৩১ জন দগ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। এ ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় ২০-দলীয় জোটের আরও ৬৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। এজাহারের আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অন্যদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। এরপর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁদের মধ্যে সোহাগ, লিটন ওরফে সাব্বির, রফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুম ও নজরুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশব্যাপী সহিংসতা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কুমিল্লা, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন থানায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়।