২৪ ঘণ্টায় ভোল পাল্টালেন নুর

Slider রাজনীতি


আবারও ভোল পাল্টালেন গণঅধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নূরুল হক নুর। বিএনপির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর বদলে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকার ঘোষণা দেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রস্তাব’ শিরোনামের মতবিনিময় সভায় কথা বলেন নুর। সেখানে তিনি বলেন, ‘গেল ৩৪ বছরে আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখেছি। দুদলের চরিত্রই দেখেছি আমরা। তাদের চরিত্র একই। এই দুই দল ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কিছুই হবে না। যে কারণে তৃতীয় কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’

এ দিন নুর আরও বলেন, বিএনপিও ৯৬ সালে এককভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। তারা তখন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এ সময়ে বিএনপির ভুল আছে বলেও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।

এ বক্তব্য দেয়ার পরের দিন বুধবার বিএনপির সঙ্গে দেড় ঘণ্টা সংলাপ করে তিনি নিজের অবস্থান বদলে ফেলেন। সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আজকে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি, খুশি হয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে সবগুলো বিষয়ে একইমত ধারণ করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা একমত হয়েছি আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আর নুর জানালেন, দেশের চলমান সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলমান সংকটকে যেভাবে আমরা দেখি তাতে বিএনপির সঙ্গে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই। আজকের আলোচনায় আমাদের ১০টা বিষয় ছিল, সেই ১০টা বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি।

এরআগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিপি। ২০২০ সালের অক্টোবরে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ধর্ষণ মামলার বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য নিজের স্বভাবজাত সুর বদলে নুর বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নয়, আমি দুশ্চরিত্রহীন বলেছি।’

নারীনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, বাংলা ভাষায় ‘দুশ্চরিত্রহীন’ শব্দই নেই, নূর আসলে কৌশলে দায় অস্বীকারের অপচেষ্টা করছেন। অভিযোগ খণ্ডন করে নুর বলেন, দুশ্চরিত্রহীন, মানে তাকে চরিত্রবান বা চরিত্রহীন কোনোটাই বলিনি। তিনি অন্যের প্ররোচনায় এসব কাজ করেছেন।

জবাবে ধর্ষণের মামলা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বলেন, নুর আগেই আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে ফেসবুক লাইভে আমাকে দুশ্চরিত্রা বলে। এতেই বোঝা যায় যে, তার আসল উদ্দেশ্য কী।

এছাড়াও নুর ছাত্রলীগের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিপরীত মতাদর্শের ব্যক্তি ছিলেন কি না; আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

গণভবনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করেন নুর। আবার সামনে গিয়ে ‘মায়ের মতো’ বলে প্রশংসা করেছেন। কখনো বিএনপির সমালোচনা আবার কখনো দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গুণকীর্তন করেন তিনি।

গত বছর মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন এবং বাংলাদেশের সংবিধানকে নিয়ে দেয়া নুরের একটি বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নুরের এই বক্তব্যে কোরআনের অবমাননা হয়েছে দাবি করে অনেকেই তার গ্রেফতার দাবি করেন। এমনকি নুরের অনেক সমর্থকও এই ইস্যুতে তার সমালোচনা করেছেন।

এ সময়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে তওবা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া সেই ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে নুর বলেন, ‘কোরআন যদি মুসলমানের ধর্মগ্রন্থ হয়ে থাকে আর বাইবেল যদি খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ হয়ে থাকে, তাহলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব বাংলাদেশির জন্য বাইবেল এবং কোরআনের সমতুল্য হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।’

সেই ভিডিওতে নুরের আশপাশে যারা ছিলেন তাদের মাথার ক্যাপ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট যুব অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেয়া সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *