দুই দুর্নীতি মামলা খালেদার বিরুদ্ধে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ ২৫ মে

Slider জাতীয়

khaleda_sm_258978696

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ। আগামী ২৫ মে অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ ও তাকে জেরার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুই আসামির পক্ষে হারুন-অর-রশিদকে জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। ওই মামলায়ও বাদী ও প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন হারুন-অর-রশিদ। আগামী ২৫ মে অসমাপ্ত জেরারও দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এদিকে খালেদা জিয়া এ দুই মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে না গিয়ে শুনানি পেছাতে তার আইনজীবীদের মাধ্যমে যে দু’টি সময়ের আবেদন জানান, সেগুলো নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে তার অনুপস্থিতির দুই আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

মামলা দু’টির সাক্ষ্যগ্রহণ ও সাক্ষীকে জেরার দিন ধার্য ছিল মঙ্গলবার (৫ মে)। তবে সকাল সাড়ে দশটার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর খালেদা জিয়া আসছেন না বলে জানিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। এ সময় আদালত আসামির অনুপস্থিতিতেও জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলতে পারে বলে জানিয়ে তা শুরুর আদেশ দেন।

প্রথমেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা শুরু হয়। মামলার দুই আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে তাকে জেরা করেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান।

অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানের পক্ষে জেরা পরে করবেন বলে জানান তার আইনজীবীরা। এরপর আদালতের নির্দেশে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী হারুন-অর-রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারুন-অর-রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কোনো আসামি না থাকায় আসামিপক্ষের জেরা বাতিল করেছিলেন আদালত। ৫ এপ্রিল খালেদার পক্ষে তাকে জেরা করতে রি-কলের আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন। সে অনুসারে মঙ্গলবার হারুন-অর-রশিদকে খালেদা ও তারেকসহ অন্য আসামিদের পক্ষে জেরার জন্য রি-কল করা হয়।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন। হারুন-অর-রশিদের দুই মামলারই সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলে এ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।

গত ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়াসহ তিন আসামিকে জামিন দিয়ে ও আসামিপক্ষের চারটি আবেদন মঞ্জুর করে মামলা দু’টির শুনানি ৫ মে পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।

ওইদিন খালেদার উপস্থিতিতে তার সঙ্গে জামিন পেয়েছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অন্য দুই আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

দীর্ঘদিন ধরে শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। ৪ মার্চ এ গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখেন আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা-তারেক ও জামিনপ্রাপ্ত দু’জন ছাড়া অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে।

আগের বিচারকের প্রতিও অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো ছাড়াও তার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এজলাসকক্ষেই বিশৃঙ্খলা ও হই-হট্টগোল এবং বিচারকের প্রতি কটূক্তি করে আসছিলেন খালেদার আইনজীবীরা।

এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারক বদল করা হয়।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৬ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৮ দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *