নতুন নারী বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের গল্প

Slider বাংলার আদালত


ফাহমিদা কাদের। নাটোরের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। পাকিস্তান আমলে তার নানা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। বাবা আব্দুল কাদের তালুকদার আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। স্বামী মকবুল আহসান টিটো সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফাহমিদা বাবার অনুপ্রেরণায় বিচারিক জীবন বেছে নেন।

৩২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। সফলতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। হাইকোর্টে বিচারকাজ শুরুর দিন সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের বলেন, আজ সত্যিই স্মরণীয় মুহূর্ত। স্মরণ করছি আমার বাবাকে। যার উত্তরসূরি হিসেবে বিচার বিভাগে এসেছি।

তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারক হিসেবে সুদীর্ঘ ৩২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আমার অর্পিত দায়িত্ব এবং বিচারপতি হিসেবে শপথের মান অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করব। উচ্চ আদালতে বিচারকাজ পরিচালনায় সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন ফাহমিদা কাদের।

তিনি নির্ভিকভাবে বিচারকাজ পরিচালনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কবিতা থেকে কয়েকটি পংক্তি উচ্চারণ করেন—

ভীতি-নিষেধের ঊর্ধ্বে স্থির
রহি যেন চির উন্নত শির
যাহা চাই যেন জয় করে পাই
গ্রহণ না করি দান
হে সর্বশক্তিমান।

নাটোরে ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান ফাহমিদা কাদের কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯৮১ সালে ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৩ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি নেন। তিনি আইন বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ (প্রবেশনার) হিসেবে যোগদান করেন। বিচারক নিয়োগের ওই পরীক্ষায় তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করে নিজ মেধার স্বাক্ষর রাখেন। সেখান থেকেই শুরু বিচারিক জীবনের পথ চলা।

সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছর পরই ১৯৯৬ সালে প্রথম পদন্নোতি পেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে কুমিল্লার আদালতে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে চাঁদপুরে যোগ দেন। ২০০৪ সালে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিভাগীয় স্পেশাল জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জেলা জজ ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করার স্বীকৃতি স্বরূপ রোববার (৩১ জুলাই) তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে এই নিয়োগ দেন।

বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ ওমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফাহমিদা কাদেরের স্বামী মকবুল আহসান টিটো ছিলেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ। তিনি এখন অবসরে আছেন।

এই দম্পতির তিন সন্তান। তারা পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করছেন। ফাহমিদা কাদেরের নানা ব্রিটিশ শাসনামলে হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তার বাবা আব্দুল কাদের তালুকদার ছিলেন জেলা জজ। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবও ছিলেন। ফাহমিদা কাদের ভারত, ইউএসএ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সংবর্ধনার সময় বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, আজ থেকে আপনার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। আপনি অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। আপনি ভালো বিচারক হিসেবে সুনাম অর্জন করবেন। এ প্রত্যাশা আমরা রাখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *