দুদকের মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপের ২০ বছর কারাদণ্ড

Slider বাংলার আদালত


দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি কারণকে ২১ বছর করে সাজা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৭ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে তাদের এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ।

দুদকের এ মামলার আইনজীবী চট্টগ্রাম আদালতের পিপি মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয় গত ১৮ জুলাই।

এদিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদ যুক্তিতর্ক শেষে ২৭ জুলাই রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন।

প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ ও সন্তানদের নিয়ে তিনি বসবাস করতেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এরপর টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন প্রদীপ কুমার দাশ। ওই মামলায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি দেয়া রায়ে প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের হয়।

এর মধ্যে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্যবিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়।

অভিযোগপত্রে প্রদীপের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে সেই সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া উভয়ের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দুদক।

অভিযোগপত্রে চুমকি কারণের নামে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটায় দুই কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা বাড়ি, পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমি এবং কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকার একটি ফ্ল্যাটের বিষয় উল্লেখ আছে।

২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের মামলায় আসামি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল।

গত ২৯ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার ৬ জুন থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রথমে দুদকের মামলায় মোট ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

অবৈধ সম্পদের মামলা দায়েরের পর থেকে চুমকি কারণ আত্মগোপনে ছিলেন। গত ২৩ মে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *